তিতুমীর কলেজ ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বন্ধু-সহপাঠি ও আন্দোলনের কর্মীরা। পাশাপাশি শিক্ষার্থী-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলাও লিখিতভাবে প্রত্যাহারের দাবি তাদের।
Advertisement
শুক্রবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন সিদ্দিকুর। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হন তিনি। এরপর দুটি গাড়ীতে ডাক্তার ও বন্ধু-সহপাঠীরা মিলে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের যান সিদ্দিকুর। হাসপাতালের ৬ তলার ভিআইপি কক্ষে রয়েছেন সিদ্দিকুর।
সিদ্দিকুর সাংবাদিকদের বলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও চোখে এখন কিছুই দেখতে পাই না। আমি চোখের আলো হারিয়েছি কিন্তু আমার চোখের বিনিময়ে বন্ধুদের জীবনে শিক্ষার আলো ফিরে আসুক। ওই দিন যে অন্যায় আচরণ হয়েছে আমার ওপর, এর জন্য আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। বিষয়টি রাষ্ট্র দেখবে, প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
দৃষ্টি হারানো সিদ্দিকুর বলেন, শিক্ষার জন্য আমার এই ত্যাগ। বিনিময়ে বঞ্চিত সকলকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা হোক- এটাই চাওয়া।
Advertisement
সিদ্দিকুরের দেশে ফেরাকে ঘিরে বিমানবন্দরে নিজেদের চোখ বেঁধে প্রতিবাদী অবস্থান নেন বন্ধু-সহপাঠি ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় শ্লোগানও দেন তারা।
কথা হয় সিদ্দিকুরের বন্ধু এবং আন্দোলনে অংশ নেয়া তিতুমীরের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রাশেদ মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিদ্দিকুর কিভাবে কাদের কারণে চোখ হারিয়েছে তা কারো কাছে অস্পষ্ট নয়। পুলিশের তদন্ত কমিটিও ঘটনার জন্য সাত পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করেছে। আমরা সিদ্দিকুরের চোখ হারানোয় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
সিদ্দিকুরের ঘনিষ্ট সহপাঠি শেখ ফরিদ জাগো নিউজকে বলেন, সরকার অনেক চেষ্টা করেছে। সরকারি চেষ্টায় সিদ্দিকুরের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। বন্ধু চোখের আলো পায়নি। বন্ধু আমাদের দেখতে পাচ্ছে না। এটা ভীষণ কষ্টের।
তিনি বলেন, শুধু দেখানো কিংবা শোনানো কোনো তদন্ত কমিটির সুপারিশ বিশ্বাস করি না। বাস্তবায়ন দেখতে চাই। পুলিশের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উন্মুক্ত করা হোক। সত্যিকার অর্থে সিদ্দিকুরের চোখ হারানোর ঘটনায় যারা দোষী তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
Advertisement
সিদ্দিকুরের অপর সহপাঠি নোমান উদ্দিন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছ। এ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সিদ্দিকুরের চোখ হারানোর ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার ও সাত দফা দাবি পূরণে রোববার প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই সকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে নীতিমালা প্রণয়নসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার পর পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ হঠাৎ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে সিদ্দিকুর রহমানকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল এবং পরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, সিদ্দিকুর ডান চোখে আলো দেখছেন না। বাঁ চোখের একদিক থেকে আলো কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছেন।
এরপরই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিদ্দিকুরকে চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়। সেখানে শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
এদিকে ঘটনার পরদিন রাতে ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলা নং ২৬।
সিদ্দিকুরের চোখ নষ্টের খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তে গত ২২ জুলাই রমনা বিভাগ পুলিশ পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি প্রমাণ হয়।
জেইউ/এএইচ/পিআর