ধর্ম

যে সব ক্ষেত্রে নারীদের হজ পুরুষদের থেকে ভিন্ন

হজ্জ আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ওপর ফরজকৃত ইবাদত। এটি ইসলামের পঞ্চম বুনিয়াদ। এ ইবাদত নারীদের জন্য জিহাদতুল্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘হজ হচ্ছে তোমাদের জন্য জিহাদ।’ (বুখারি)

Advertisement

নারীদের হজ পালনের ক্ষেত্রের পুরুষদের থেকে অনেক ভিন্নতা রয়েছে। তাছাড়া মাবরুর হজ পালনে হজের বিধি-বিধানগুলো জানা এবং সে অনুযায়ী হজ সম্পাদন করা জরুরি।

মাবরুর হজের ব্যাপারে প্রিয়নবি বলেছেন, ‘এর প্রতিদান হচ্ছে জান্নাত।’ (বুখারি) আর তাই প্রত্যেক নারীর জন্য হজের করণীয় এবং পুরুষদের থেকে ভিন্ন বিষয়গুলো জেনে নেয়া আবশ্যক। আর তাহলো-

>> যে কোনো ইবাদতেই ইখলাস থাকা জরুরি। হজের ক্ষেত্রে একনিষ্ঠতা আরো বেশি জরুরি। বিশেষ করে রিয়া দূর করা আবশ্যক।

Advertisement

>> ইবাদত পালন করতে হবে সুন্নাহর অনুসরণ করে। সুতরাং হজের বিধান পালনে অবশ্যই সুন্নাহর অনুসরণ করা জরুরি। কেননা প্রিয়নবি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করে যা আমার শরিয়তে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম)

>> সব ধরনের শিরক এবং গোনাহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। হজসহ সব ইবাদতে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষ করে শুধুমাত্র নারীর জন্য পালনীয়>> কোনো নারীই মাহরাম ছাড়া হজের সফরে বের হতে পারবে না। প্রিয়নবি বলেছেন, ‘কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফরে যাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

নারীর মাহরামনারীর স্বামী এবং যাদের সাথে নারীর বিয়ে হারাম এমন পুরুষগণ। আর বিয়ে যে কারণেই হারাম হোক- নিকটাত্মীয়তা, দুগ্ধপান বা বৈবাহিক আত্মীয়তার কারণে। মাহরাম থাকা শর্তে নারীর ওপর হজ ফরজ। যদি নারীকে সঙ্গ দেয়ার মতো কোনো মাহরান পাওয়া না যায় তবে ওই নারীর ওপর হজ ফরজ হবে না।

Advertisement

>> পুরুষের ইহরামের পোশাক নির্ধারিত। আর নারী যে কোন ধরনের শালীন পোশাকে ইহরাম বাঁধতে পারবেন। সেটা যে কোনো রঙের হোক। তবে অশ্লীল ও উত্তেজক পোশাক থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

সাবধান থাকতে হবে-পোশাক যেন সংকীর্ণ, স্বচ্ছ, কাটা বা ছেঁড়া, ডিজাইন করা ইত্যাদি না হয়। অনুরূপভাবে পুরুষদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক বা অমুসলিমদের সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাকও পরিধান করা যাবে না।

>> ইহরাম বাঁধার পর নারীর জন্য সব ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা নাজায়েয। তা শরীরে হোক আর পোশাকে হোক।

>> ইহরাম অবস্থায় নারীর মাথার চুল বা শরীরের পশম যে কোনো মাধ্যমে তুলে ফেলা ও নখ কাটা নাজায়েয।

>> ইহরামকারী নারী নিকাব এবং হাত মোজা পরিধান করবে না। প্রিয়নবি বলেছেন, ‘নারী নিকাব পরবে না, মোজা পরবে না।’ (বুখারি)

>> ইহরাম অবস্থায় নিকাব ও মোজা পরিধান নিষিদ্ধ এ অজুহাতে কোনো নারী তার চেহারা এবং হাত অন্য পুরুষের সামনে প্রকাশ করবে না।

কেননা হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আমরা যখন প্রিয়নবির সঙ্গে ইহরামরত ছিলাম তখন আরোহীরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা মাথার ওড়না দ্বারা চেহারা আড়াল করতাম। তারা পার হয়ে গেলে আবার মুখ খোলা রাখতাম।’ (আবু দাউদ, সহিহা)

>> ইহরামকারী নারীর জন্য কামিজ, সেলোয়ার, পায়ের মোজা, স্বর্ণের চুড়ি, আংটি, ঘড়ি ইত্যাদি পরিধান করা জায়েয। তবে হজের সময় অন্য পুরুষ থেকে সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখা ফরজ।

>> হজ ও উমরার উদ্দেশ্য নিয়ে মিকাত অতিক্রমের সময় যদি নারী হায়েজগ্রস্ত (ঋতুস্রাব) হয়ে যান তখন অনেকে পবিত্র অবস্থায় ইহরাম করাকে শর্ত মনে করে ইহরাম করেন না। এটি স্পষ্ট ভুল। কারণ হায়েজ ইহরামের প্রতিবন্ধক নয়। বরং হায়েজগ্রস্ত নারীও ইহরাম করবেন। তবে তারা শুধুমাত্র বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবেন না।

>> কোনো নারী যদি ইহরাম না বেঁধে মিকাত অতিক্রম করেন তবে তার ওপর ওয়াজিব হল পুনরায় মিকাতে ফিরে আসা। যদি তিনি মিকাতে ফিরে না আসেন তাহলে একটি ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর দম (পশু কুরবানি) ওয়াজিব।

>> নারীরা পুরুষের মতো উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে না। বরং নিচুস্বরে তালবিয়া পড়বেন। যাতে শুধুমাত্র নিজ কানে শুনা যায়।

>> ফেতনা থেকে বাঁচতে এবং কারো নজরে পড়া থেকে দূরে থাকার জন্য দুরুত্ব বজায় রেখে তাওয়াফ করবে।

>> নারীদের জন্য বাইতুল্লাহ তাওয়াফে রমল ও ইযতিবা নেই। এ দুটি পালন করা পুরুষদের জন্য সুন্নত।

>> নারীরা হজ ও ওমরা থেকে হালাল হওয়ার জন্য মাথার চুলের অগ্রভাগ আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ (প্রায় ২ সে.মি.) কেটে ফেলবে।

>> যদি কোনো নারী তাওয়াফ শেষ করার পর সাঈ করার আগেই হায়েজগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সে ওই অবস্থায়ই সাঈসহ হজের বাকী কাজ সম্পন্ন করবে।

>> যদি নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়, তবে হায়েজরোধক ঔষধ খাওয়া বৈধ। তবে ঔষধ না খাওয়াই উত্তম।

>> নারীর জন্য হজের সব কার্যাবলী সম্পাদনে পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে চলা। বিশেষ করে কাবা শরিফ তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামেনির কাছে যাওয়ার চেষ্টা না করা। যখন ভিড় কম থাকে তখন তাওয়াফ করা।হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা পুরুষদের থেকে দূরে একাকী তাওয়াফ করতেন। ভিড় থাকলে তিনি হাজারে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়েমানি স্পর্শ করতেন না।

>> নারীদের জন্য অজু খানায় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যে সব স্থানে পুরুষের উপস্থিতি বেশি সেখানে নারীরে মুখ, হাতের কনুই, পায়ের গোছা, মাথার ওড়না উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা। এর ফলে সে নারী নিজে ও তার দ্বারা অন্য পুরুষেরা ফেতনাগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্ত থাকে।

>> নারীদের জন্য ফজরের আগে মুজদালিফা ত্যাগ করার অনুমতি রয়েছে। যাতে জামরা আকাবায় (বড় শয়তানকে) পাথর নিক্ষেপে ভিড় এড়াতে পারে। বিশেষ করে ভারী নারী ও দুর্বল নারীদের এ অবকাশ দিয়েছিলেন প্রিয়নবি।

>> নারীর মাহরাম যদি মনে করেন পাথর নিক্ষেপে খুব ভিড় তবে সেক্ষেত্রে নারীদের জন্য দেরী করে রাতের বেলায় কংকর নিক্ষেপ করা জায়েয।

বিশেষ সতর্কতাহজের কাজ থেকে পরিপূর্ণ হালাল হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো নারীর জন্যই তার স্বামীকে সহবাস করার বা আলিঙ্গন করার সুযোগ দেয়া জায়েয নেই।

তিন কাজ সম্পাদনে পরিপূর্ণ হালাল হয় নারী-১. বড় শয়তানকে ৭টি পাথর নিক্ষেপ করা।২. মাথার চুলের আগা এক কর পরিমাণ (প্রায় ২ সে.মি.) কেটে ফেলা।৩. তাওয়াফে ইজাফা আদায় করা।

ইহরামকালীন সময়ে নারীর জন্য যা কিছু হারাম হয়েছিল এ তিনটি কাজ সম্পন্ন করলে আবার আগের মতো সব কিছু হালাল হবে। এমনকি সহবাসও। নারীরা যদি এ তিনটির মধ্যে দুটি সম্পন্ন করে, তাহলে তার জন্য সহবাস ছাড়া বাকী সবকিছু হালাল হবে।মনে রাখতে হবে-

>> চুলের আগা কাটার সময় তা অন্য পুরুষকে দেখানোও নাজায়েজ। অনেক নারী মারওয়া পাহাড়ের ওপর এ কাজটি করে থাকেন। এটি ঠিক নয়। কারণ চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত।

>> হজের সময় পুরুষদের সামনে ঘুমানো থেকে সাবধান হওয়া জরুরি। আরাফা, মুজদালিফা ও মিনায় অনেক মহিলাকে রাস্তায়, ফুটপাতে, ওভার ব্রিজের নীচে, মসজিদে খাইফে পুরুষদের সঙ্গে অথবা পুরুষদের কাছাকাছি স্থানে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। এটি বড় ধরনের গোনাহের কাজ।

>> হায়েজ ও নিফাসগ্রস্ত নারীর জন্য বিদায়ী তাওয়াফ নেই। এটি নারীদের জন্য ইসলামী শরিয়তের বিশেষ ছাড়। হায়েজগ্রস্ত নারীর জন্য বিদায়ী তাওয়াফ না করে তার পরিবারের সঙ্গে দেশে ফিরে যাওয়া বৈধ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব নারীকে তাদের জন্য নির্ধারিত আলাদা বিষয়গুলোকে যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। এগুলোকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। নারীদেরকে হজে মাবরুর আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস