বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর পথঘাট, অলিগলি। জলজট আর যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী। রাজধানীর জলজট নিরসনে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে প্রতি বছর। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
Advertisement
জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমত ভূগর্ভে পানি শোষণ করে নেয়া এবং অন্যটি খাল-বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। রাজধানীতে এ দুই পথের একটিও কার্যকর নেই। যে কারণে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এছাড়া ড্রেনগুলো আবর্জনায় ঠাসা। অনেক ক্ষেত্রে নালার মুখই আবর্জনায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, জলাবদ্ধতা দূর করার দায়িত্ব ওয়াসার। ওয়াসা বলছে, তার নয়। যে যার মতো দায় এড়াতে চাচ্ছেন কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। বরং সমস্যা দিন দিন প্রকোপ আকার ধারণ করছে। জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীর সীমাহীন ভোগান্তির দায় নিতে নারজ প্রতিষ্ঠানগুলো। তাহলে এ দায় কার- এমন প্রশ্ন রাজধানীবাসীর।
বুধবার রাজধানীর জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, সব খাল বন্ধ। খালের উপর পাঁচতলা বাড়ি। কোথায় যাবে পানি। এ সমস্যা সমাধানে শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই। যে জায়গাগুলোতে স্লুইসগেট বন্ধ হয়েছে সেখানে তা বানাতে হবে। কিন্তু এ দায়িত্ব তো এক এক ডিপার্টমেন্টের। এ সমস্যা সমাধানে গত সপ্তাহে কো-অর্ডিনেশন মিটিং করেছি। গত বছর যে এলাকায় ড্রেন বানিয়েছি সে এলাকায় এবার পানি নেই। নতুন নতুন এলাকায় (জলাবদ্ধতা) হচ্ছে। সমাধানে সময় লাগবে।
Advertisement
দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন জলাবদ্ধতা সরেজমিন দেখতে হাঁটু পানিতে নামেন। তিনি বলেন, টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টির পর নগরীর পানি নেমে যাওয়ার জন্য যে ধরনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার দরকার ছিল তেমনটি নেই। এজন্য জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রমিজ করছি আগামী বছর থেকে বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা হবে না। এটা কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতি না। আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকায় যে ৪৬টি খাল আছে, এর মধ্যে ১৮টির উন্নয়ন করতে হবে। ওয়াসাকে নির্দেশনা দিয়েছি, হেভি (ভারি) বৃষ্টি হলেও তিন ঘণ্টার মধ্যে যেন পানি নিষ্কাশন হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ডিএনসিসির ইঞ্জিনিয়ার শরিফ উদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন করা রাজধানীর বিভিন্ন খালের চিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।
শরিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহানগরীতে মোট ৪৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খালের রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। এছাড়া মহানগরীর সকল খালের মালিকানায় রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক। ডিএনসিসি এলাকায় ২৩টি খাল রয়েছে, যার সবগুলো অবৈধ্য দখলে। সেগুলো দিয়ে পানি নামছে না। এ কারণে অল্প বৃষ্টি হলেও রাজধানীজুড়ে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।
Advertisement
সভায় স্বল্প মেয়াদের কাজের অংশ হিসেবে খালের উপর বিদ্যমান সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বর্ষার আগেই খালের আবর্জনা পরিষ্কারের কথা উল্লেখ করা হয়। আর দীর্ঘ মেয়াদের প্রকল্প হিসেবে ওয়াসা ও জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে সকল খালের প্রকৃত সীমানা চিহ্নিত করে মূল প্রশস্ততায় খাল পুনঃখনন ও পাড় সংরক্ষণের কথা বলা হয়।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান তৈরি জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি না হলে জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢাকার খালগুলো আগে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। খাল এখন অবৈধ দখল বা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে নগর জুড়ে। খালগুলোর দেখভালের দায়িত্ব শুধু ওয়াসার নয় সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থারও। খালগুলো উদ্ধার এবং সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করলে ফল পাওয়া যাবে।
এএস/এএইচ/এমএআর/পিআর