মাছে ভেজাল না দিতে মাছ ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকের মাছে ভেজাল দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। এই ভেজাল দিয়ে বেশি মুনাফার লোভ করবেন না। এটা করতে গিয়ে একসঙ্গে নিজের ব্যবসারও সর্বনাশ, দেশেরও সর্বনাশ। এতে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।
Advertisement
বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৭-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানির ক্ষেত্রে সবসময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোনোরকম অভিযোগ যেন আমাদের বিরুদ্ধে না আসে। মাছচাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আমি অনুরোধ করব- সামান্য একটু মুনাফার লোভে নিজের ব্যবসাটাও যেমন নষ্ট করবেন না, তেমনি দেশের রফতানি বা পণ্যটাও নষ্ট করবেন না।
বর্তমানে দেশেও মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। আগে একজন রিকশাওয়ালা ও দিনমজুর যেখানে শুধু চাল কিনতে সক্ষম ছিল। এখন তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তারাও মাছ কেনে। এজন্য মাছের চাহিদাও বেড়েছে। উৎপাদনও বেড়েছে।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেখলাম চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি নেবে না। কেননা, চিংড়ি মাছের মধ্যে লোহা ঢুকিয়ে দিয়ে ওজন বাড়িয়ে সেটা রফতানি করা হয়। এটা যখনই ধরা পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই চিংড়ি রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।
‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে মৎস্য খাতের উন্নয়নের জন্য সেইসময় ৪০ কোটি টাকা ও একটি কমিটি করে দেই। সেই টাকা দিয়ে প্রত্যেকটি হ্যাচারি উন্নত করা হয়। ধীরে ধীরে মানসম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে আবার মৎস্য রফতানি সচল হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করিছিলাম আমাদের কৈ মাছ, মাগুর মাছসহ দেশি মাছের ওপর গবেষণার জন্য। আগে দেখতাম তেলাপিয়া ও কার্পজাতীয় মাছ নিয়েই কেবল গবেষণা চলত। কোন মাছের বাজারে চাহিদা বেশি সেটা নিয়েই আমাদের গবেষণা করা, উৎপাদন বৃদ্ধি করা ও প্রক্রিয়াজাত করে সেটা বিদেশে রফতানি করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আজ দেশের ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা মৎস্যসম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত। জিডিপিতে মৎস্যসম্পদের অবদান প্রায় ৪ শতাংশ। প্রাণিজ আমিষের ৬০ ভাগ যোগান দেয় মৎস্য খাত।
Advertisement
গণভবনে মাছের পোনা অবমুক্ত করছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার ও ভারতর সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে সমস্যা ছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা আইন করে যান। ৭৫ এর পরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা সমুদ্রসীমা নিয়ে ভয়ে একটি কথাও বলেনি। এ সমস্যার সমাধান আমরা করেছি। বিশাল এ জলরাশিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, এখন আমরা মাছের প্রজনন এলাকাও নিরাপদ করেছি। মাছ চাষের জন্য কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছি। জলমহাল নীতিমালা করেছি। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধন প্রতিরোধে জেলেদের ভিজিএফ দেয়া হচ্ছে। এতে ফলাফলও এসেছে। ইলিশের উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি সাইজও বড় হয়েছে। বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। ফলে এখন মানুষ প্রচুর ইলিশ পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশে মাছ চাষের উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায় চন্দ্র চন্দ। মৎস্য সচিব মাকসুদুল হাসান খান স্বাগত বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১৩ জন মৎস্য চাষি ও প্রতিষ্ঠানকে মৎস্য খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক প্রদান করেন। এদের মধ্যে চারজন স্বর্ণ ও নয়জন রৌপ্যপদক লাভ করেন। পদক ও সনদপত্রসহ নগদ ৫০ হাজার ও ৩০ হাজার টাকার চেকও বিজয়ীদের প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
১৮ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত এবারের মৎস্য সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে। মৎস্য সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ‘মাছ চাষে গড়ব দেশ, বদলে দেব বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠান শেষে গণভবনের লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এফএইচএস/জেডএ/জেআইএম