কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমর, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহে তলিয়ে যাওয়া নিম্নাঞ্চলের ৭৫ হাজার মানুষ এখনো কোনো ত্রাণসহায়তা পাননি।
Advertisement
এদিকে বন্যায় ৬৭টি স্কুল পানিবন্দি হয়ে পড়ায় পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। চরে গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দেয়ায় স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে গবাদিপশু।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায়, নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চিলমারী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধরলা নদীর ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ১৯ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।
রোববার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দি এলাকাগুলোতে নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুদের বন্যার পানি ডিঙিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এছাড়াও সেনিটেশন কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্তা।
Advertisement
সদরের পোড়ারচর এলাকার হাসেম আলী (৬৫), লাকী (২৮) ও মনোয়ারা (৪০) বলেন, বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৫ দিন ধরে পানির মধ্যে আটকা আছি। কোনো কাজ-কাম নাই। শুকনো খাবার খেয়ে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাই নাই।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, এখন পর্যন্ত কোনো চাহিদা পাইনি। আগামীকাল ইউনিয়ন দুর্যোগ কমিটির সভায় সংশ্লিষ্টদের দুর্গতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার চৌধুরী জানান, চলতি বন্যায় জেলায় ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবিন্দ হয়ে পড়েছে। ফলে পাঠদানে সাময়িকভাবে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ১১টি চিলমারীতে ১৯টি, রৌমারীতে ১৫টি, রাজিবপুরে ৮টি, উলিপুরে ১১টি এবং ভুরুঙ্গামারীতে ৩টি। পাঠদান অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মাস্টার জানান, চর ও দ্বীপচরগুলোতে পানি ওঠায় চারণভূমির ঘাস ও কাশিয়া তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে চরম গো-খাদ্য সংকট। এরফলে এই অঞ্চলের মানুষ স্বল্পমূল্যে গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছে।
Advertisement
সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে সদর উপজেলার কাচিচর ও যাত্রাপুর এলাকায় ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে পাশের উঁচু স্থানে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর ইউএনও আমিন আল পারভেজ জানান, সদরে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রয়েছে। খুব শিগগিরই পানিবন্দিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, আমাদের সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটিগুলো চাহিদা দিলেই বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়াও তাক্ষণিকভাবে উদ্ধার বা সহায়তার প্রয়োজন হলে সকলকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৫ লক্ষ টাকা ও দেড়শ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়াও ১৫ লক্ষ টাকা ও তিন হাজার বান্ডিল ঢেউটিনের চাহিদা দেয়া হয়েছে।
নাজমুল হোসেন/এফএ/জেআইএম