শনিবার রাত ২টা ২৪ মিনিট। হঠাৎ করে জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের ফোনে কল এল। অপরপ্রান্ত থেকে এক ছোট ভাই বলল ভাইয়া খুব বিপদে আছি, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে আসেন। দেরি না করেই ছুটলাম হাসপাতালের দিকে।হাসপাতালে ঢুকতেই কানে আসতে শুরু করল কান্নার রোল। ছোট ভাইটি ছুটে এসে বলল আমার নানী আর নেই। কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে। কথাটি শুনেই খুব মর্মাহত হলাম। সান্ত্বনা দিলাম ওই ছোট ভাই ও তার স্বজনদের। এরপর তাদের হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। হাসপাতালের ভেতরে যেতে না যেতেই দু`তলায় সিঁড়ির নিচে চোখে পড়ল, সেখানে এক বৃদ্ধ মেঝেতে পড়ে রয়েছে। অনেককেই জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে ওই বৃদ্ধার। এক রোগীর স্বজন বললেন, ওই মহিলাটি মানসিক ভারসাম্যহীন।রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কে বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিড়ির নিচে ফাঁকা মেঝেতে প্রাথমি চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।ওই অজ্ঞাত রোগীটি দেখে অনেকেই মনে করছেন বৃদ্ধা মনে হয় বেঁচে নেই। কর্তব্যরত নার্সদের অবগত করা হলেও কেউ দেখতে আসেনি।বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা মিজানুর রহমান নামে এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করর বলেন, সরকার সব সময় বলেন দেশের কোনো অসহায় মানু্ষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না। কোনো রোগী যদি চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারে হাসপাতলের সমাজসেবা বিভাগ থেকে তার যাবতীয় খবর বহন করা হবে। আসলে এইসব মুখের কথা। বাস্তবতা হলো মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী তো দুরের কথা, একজন স্বাভাবিক রোগীও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার রাত ৯.৩০ মিনিটে ওই অজ্ঞাতনামা বৃদ্ধাকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় মনির নামে এক ব্যক্তি ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে। এরপর জরুরি বিভাগ থেকে দুর্ঘনায় আহতের ক্ষত পরিষ্কার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি নিদের্শনা দেয়া হয়।জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা: মেহেদী হাসান জানান, ওই অজ্ঞাত বৃদ্ধা দুর্ঘটনায় দুই পায়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।তাৎক্ষণিকভাবে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা: আবু মো: খায়রুল করিবকে অবহিত করা হলে তিনি জানান, ওই মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধার জন্য হাসপাতালের সমাজ সেবা বিভাগ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।উল্লখ্য, এ ধরনের অসহায় ও অজ্ঞাত রোগীদের সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য ঠাকুরগাঁও সরকারি হাসপাতালে রয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি `রোগী কল্যাণ অফিস`। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এসব রোগীর দু`জন ছাড়া ৯৬ জনই পাননি সমাজকল্যাণ অফিসের কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। শুধু সদর হাসপাতালই নয়, উপজেলা হাসপাতালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের `রোগী কল্যাণ অফিস` রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অফিস থেকে গরিব ও অজ্ঞাত রোগীরা তেমন কোনো সেবা পান না। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন বলেন, `অসহায় ও অজ্ঞাত রোগীদের অনেকেই সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে সাহায্য-সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি। এমন সব রোগীই যাতে কল্যাণ সমিতি থেকে সেবা পান, সেটি নিশ্চিত করতে আমি কাজ শুরু করেছি। শিগগির এর সুফল পাওয়া যাবে।হাসপাতালগুলোতে থাকা সমাজকল্যাণ অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এ সময়ের বাইরে দুস্থ রোগী এলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া ওই অফিস থেকে অজ্ঞাত রোগীদের খোঁজ করা তো দূরের কথা, তাদের খোঁজ-খবর নিতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাসপাতালে যাওয়ার নজির নেই। রোগীদের প্রতি সমাজকল্যাণ অফিসের এমন নানা অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য একে অপরকে দুষছেন চিকিৎসক ও সমাজসেবা কর্মকর্তারা। সরকারি বরাদ্দ ছাড়াও যাকাত, মানুষের দান-অনুদান থেকে অর্থ পায় রোগী কল্যাণ সমিতি। ওই অর্থ থেকে দুস্থ, অসহায় ও অজ্ঞাত রোগীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। বিশেষ করে রোগীর ওষুধ-পথ্য, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। অথচ অনেক রোগীই এ সহায়তা পান না।রিপন/এমএএস
Advertisement