খেলাধুলা

‘এবার প্রতিভা অন্বেষণ হবে আরও বড় পরিসরে’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ থোক বরাদ্দের টাকায় গত অর্থ বছরে ‘তৃণমূল থেকে প্রতিভা অন্বেষণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির’ আয়োজন করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ১৫ কোট ১০ লাখ টাকার এ কর্মসূচির আওতায় ছিল ৩১ ডিসিপ্লিন। কিছু ফেডারেশন এ কর্মসূচি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করলেও কিছু ফেডারেশনের কার্যক্রম ছিল নামকাওয়াস্তে।

Advertisement

কয়েকটি ফেডারেশন তো পুরো বরাদ্দই নিতে পারেনি। এসব ফেডারেশনের ব্যর্থতার কারণে কর্মসূচির দেড় কোটির বেশি টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। সবচেয়ে বেশি ৮৯ লাখ ১২ হাজার টাকা ফেরত গেছে অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের। বাকি অর্থ ফেরত গেছে সাঁতার, ভারোত্তোলন ও টেনিসের।

তারপরও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনে করছে তাদের এ কর্মসূচিতে কিছুটা ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও সফল হয়েছে। তাই নতুন অর্থবছরে আরও বড় পরিসরে এ কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশের ক্রীড়ার এ অভিভাবক সংস্থাটি। নতুন কর্মসূচি নিয়ে জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা রফিকুল ইসলামকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস।

জাগো নিউজ : গত অর্থবছরে তৃণমূল থেকে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। এ কর্মসূচি কতটা সফল ও কার্যকর হয়েছে বলে মনে করেন?

Advertisement

অশোক কুমার বিশ্বাস : এখানে দুটি বিষয়। এক. সফল এবং দুই. কার্যকর। আসলে প্রথম বছর আমরা সব ফেডারেশনকে এ কর্মসূচির আওতায় আনতে পারিনি। কারণ অর্থ বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। যে কারণে মাত্র ৩১ ফেডারেশন নিয়ে আমাদের এ কর্মসূচি ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, প্রতিভা খুঁজে বের করা বিবেচনা করলে এ কর্মসূচি সফল হয়েছে। তবে যদি কার্যকরের বিষয়ে আসি বলব- এটা অনেক কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ। প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করে তাদের দীর্ঘ মেয়াদী ট্রেনিং করাতে না পারলে সে কর্মসূচিকে পুরোপুরি কার্যকর বলা যাবে না।

জাগো নিউজ : যদি সফলই মনে করেন তাহলে এ কর্মসূচির ধারাবাহিকতা থাকবে কিনা। যদি থাকেও তাহলে সব ডিসিপ্লিন এ কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব কিনা?

আশোক কুমার বিশ্বাস : আসলে প্রতিভা অন্বেষণ এমন একটা বিষয় যার ধারাবাহিকতা না থাকলে কোনো কাজেই আসে না। যে কারণে আমরা নতুন অর্থবছরেও এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এবার আরো বড় পরিসরে হবে। সব ফেডারেশন ও সংস্থা থাকবে এ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে। বাজেটও বাড়বে প্রায় ৫ গুণ।

জাগো নিউজ : বলছিলেন বাজেট প্রায় ৫ গুণ হবে। তো কত টাকা হতে পারে এবারের কর্মসূচির বাজেট?

Advertisement

অশোক কুমার বিশ্বাস : আমরা একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল (পিপি) তৈরি করেছি। এবার প্রায় ৭০ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছি। আশা করি, ১৫ জুলাইয়ের আগেই আমাদের এ প্রজেক্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারব।

জাগো নিউজ : এক কর্মসূচি যদি নিয়মিতই করতে চান তাহলে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভূক্ত কেন করছেন না? তাহলে তো বিশেষ বরাদ্দের জন্য আপনাদের দৌঁড়ঝাপ করতে হয় না।

অশোক কুমার বিশ্বাস : আমরা সেটা চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বস্ত করেছে তারা দ্রুতই প্রকল্পটি অনুমোদন করে দেবে। যে কারণে আমরা আগের মতো বিশেষ থোক বরাদ্দ পাওয়ার পথেই হেঁটেছি।

জাগো নিউজ : ডিসিপ্লিন বাড়ছে, অর্থ বাড়ছে। এক কথায় পরিসরটা এবার বেশ বড়। প্রকল্পে অন্য কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন কী থাকবে?

অশোক কুমার বিশ্বাস : অবশ্যই। আগেরবার আমাদের প্রাধান্য ছিল শুধু প্রতিভা অন্বেষণে। এবার কমূসূচি হবে বছরব্যাপী। যার ৪ মাস হবে প্রতিভা অন্বেষণ এবং ৮ মাস ট্রেনিং। ফেডারেশনগুলো যদি তাদের খুঁজে বের করা প্রতিভাবানদের ট্রেনিং করাতে পারে তখনই এ কমূর্সচির ফল পাওয়া যাবে।

জাগো নিউজ : গতবার তো অনেক ফেডারেশন ঠিকমতো কাজ করেনি। যে কারণে টাকাও ফেরত দিতে হয়েছে আপনাদের। অনেক ফেডারেশন বিভিন্ন কৌশলে বিল ভাউচার তৈরি করে কর্মসূচির টাকা হাফিস করেছে বলেও অভিযোগ আছে। তাহলে এবার আপনারা কিভাবে পরিচালনা করবেন?

অশোক কুমার বিশ্বাস : আগেরবার যেসব ফেডারেশন ব্যর্থ হয়েছে তাদের আসলে সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল। ওই ফেডারেশনগুলো এখন সে দুর্বলতা কাটিয়ে তুলেছে। আমি অ্যাথলেটিক, ভারোত্তোলন ও টেনিসের কথাই বলব। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তারা এ কর্মসূচি পরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এখন তারা ভালো কাজ করছে।

জাগো নিউজ : যারা প্রথমবার ঠিকমতো কাজ করেনি এবার বরাদ্দ দেয়ার সময় কি ওই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন?

অশোক কুমার বিশ্বাস : আসলে প্রত্যেকটি ক্রীড়া ফেডারেশন ও সংস্থাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সন্তানতূল্য। তারা কোনো ভুল করলে আমার সেভাবে কঠোর হতে পারি না। আমাদের কাজ হলো তাদের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে দিয়ে আরও ভালোভাবে পরিচালিত হতে সহায়তা করা। তাই প্রথমবার ব্যর্থ হয়েছে বলে এবার বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হবে-সেভাবে আমরা ভাবছি না।

জাগো নিউজ : কবে নাগাদ প্রতিভা অন্বেষণে মাঠে নামাতে পারবেন ফেডারেশনগুলোকে?

অশোক কুমার বিশ্বাস : যদি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে জমা দেই এবং স্বাভাবিক গতিতেও আগায় তাহলেও অন্তত দুই মাস লেগে যাবে। তারপর ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে মিটিং করে টাকা বরাদ্দ শুরু করব। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রতিভা বাছাইয়ে নামতে পারব আমরা। জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিভা অন্বেষণ করে পরের মাসগুলোতে হবে ট্রেনিং।

জাগো নিউজ : গত কর্মসূচিতে তো সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ১১ লাখ টাকা করে অ্যাথলেটিক ও ফুটবলে। ৩১ ফেডারেশনের জন্য ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। এবার প্রায় ৫০ ফেডারেশনের জন্য ৭০ কোটি টাকা। তো এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কারা পাচ্ছে এবং তার পরিমাণ কত?

অশোক কুমার বিশ্বাস : এবার সব ফেডারেশনেরই বরাদ্দ বাড়বে। তবে ফেডারেশনগুলোর বরাদ্দের পরিমাণ আলাদা করে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আমরা কেবল মোট টাকা ধরে বাজেট তৈরি করেছি। আমরা যেসব ডিসিপ্লিনের খেলার সামগ্রী বেশি দামি তাদের বরাদ্দ সেভাবেই ধরা হবে।

জাগো নিউজ : অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য তো ফেডারেশনগুলো নানা তদবির করে। রাজনৈতিক শক্তিও প্রদর্শন করে কোনো কোনো ফেডারেশন কর্মকর্তারা। বরাদ্দ বাড়িয়ে নেয়ার ফেডারেশনগুলোর অকৌশল কীভাবে দূর করবেন?

অশোক কুমার বিশ্বাস : আমরা দেখব কোন কোন ফেডারেশনের ৬৪ জেলাতেই যাওয়ার সক্ষমতা আছে। ফেডারেশনগুলো যখন এজিএম ও নির্বাচন করে তখন কয়টি জেলা ভোটার থাকে সেটাও বিবেচনায় আনা হবে অর্থ বরাদ্দের সময়। আমরা এটা করব, ওটা করব, সব জেলায় যাব, টাকা বাড়িয়ে দিন-এসব ভাষণ আমরা শুনব না।

জাগো নিউজ : বলছিলেন প্রতিভা অন্বেষণ করে তাদের ৮ মাস ট্রেনিং দেয়া হবে। এ ট্রেনিংয়ের সময় ক্রীড়াবিদদের কী কী সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে?

অশোক কুমার বিশ্বাস : ৮ মাস ট্রেনিং হবে আবাসিক। স্বাভাবিকভাবেই তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করাটা হবে প্রথম কাজ। তারপর তাদের খাওয়া-দাওয়া, পকেটমানি, তাদের জন্য ট্রেনারের ব্যবস্থা করা, ক্রীড়া সামগ্রী সরবরাহ করাও হবে আমাদের কাজ। আমরা ট্রেনিংয়ের জন্য একটা সময়ও বেধে দেয়া হবে ফেডারেশনগুলোকে। কোনোভাবেই বেধে দেয়ার সময়ের কম ট্রেনিং করানো যাবে না।

আরআই/এনইউ/আরআইপি