‘সামনে ঈদ, পত্রিকার খবরে দেখলাম আজ থেকে নতুন টাকা বিনিময় করবে ব্যাংকগুলো। নাতি-নাতনিদের ঈদে সেলামি দিতে হবে। নতুন টাকা ছাড়া সেলামি দেয়া যায়? তাই সেলামি দিতে নতুন নোট নিতে আইছি। মরেই তো যাব, শখ হইছে তাই টাকা নিতে আইছি।’
Advertisement
কথাগুলো বলছিলেন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছাড়া নতুন টাকা সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংকে আসা গেন্ডারিয়ার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান।
বৃহস্পতিবার থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে ছাড়া হয়েছে নতুন টাকা। নাতিকে সঙ্গে নিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহে এসেছেন ৯৫ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান।
আলাপকালে জাগো নিউজকে তিনি জানান, বয়সের ভারে ঠিকমত হাঁটতে পারেন না। তাই নতুন টাকা সংগ্রহ করতে নাতিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বয়সের কারণে তার আঙুলের ছাপ নিচ্ছিল না। তবু তিনি হতাশ হননি। পরে নাতির আঙুলের ছাপ দিয়ে টোকেন নিয়েছেন। এখন বসে আছেন, নতুন টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।
Advertisement
হাবিবুর রহমান জানান, তার বাড়ি রাজধানীর গেন্ডারিয়ায়। একসময় ব্যবসা করতেন। এখন ছেলেরা তা দেখাশোনা করেন। ঈদ উপলক্ষে ব্যাংকে নতুন টাকা ছাড়ার খবর পেয়ে নাতিকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছেন। ঈদে এ টাকা নাতি-নাতনিদের সেলামি দেবেন।
শুধু হাবিবুর রহমানই নন, তার মতো শত শত লোক ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে সকাল থেকেই নির্দিষ্ট শাখাগুলোতে ভিড় করছেন।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে, নতুন টাকা সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইন। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ হাতের আঙুলের ছাপ মিলিয়ে নতুন টাকার টোকেন দেয়া হচ্ছে।
নতুন নোট নিতে আসা আল-আমিন নামে একজন বলেন, আঙুলের ছাপ দিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে হয়, পদ্ধতিটি ভালো। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমেছে। এখানে সিস্টেমটা সুন্দর, তবে সময় বেশি লাগছে। আমি সকাল সাড়ে ১০টায় এসেছি, এখন সাড়ে ১১টা বাজে। মনে হচ্ছে আরও ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে। আরও কয়েকটা বুথ থাকলে সময় কম লাগতে বলে মন্তব্য তার।
Advertisement
সারাদেশে উৎসাহ-উদ্দীপনায় মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র সিয়াম সাধনা করছেন। রমজান শেষে গোটা দেশ মাতবে ঈদুল ফিতরের উৎসবে।
ঈদের আনন্দ সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করে শিশু-কিশোরদের। আর তাদের ঈদ আনন্দকে আরও প্রাণবন্ত করতে পরিবারের বড়রা সেলামি হিসেবে দেন নতুন টাকা।
যে পরিবারের দাদা-দাদি আছে তারা নাতি-নাতিনদের নতুন টাকা দিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। আর এমনই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ব্যাংকগুলোতে নতুন টাকা সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন নোট বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আজিজ জানান, সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে নতুন টাকা বিনিময় চলছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে দেয়ায় সবাই সমান হারে টাকা নিতে পারছেন। আগামীতে যদি কাউন্টার বেশি প্রয়োজন হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তা করা হবে।
তিনি আরও জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে নতুন টাকা বিনিময় শুরু হয়েছে। চলবে ২২ জুন পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শাখা এবং রাজধানীর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০টি শাখায় এই নতুন নোট পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, একজন ৮ হাজার ৭০০ টাকার নতুন নোট নিতে পারবেন। প্রত্যেকে ২ থেকে ৫০ টাকা মূল্যমানের একটি করে প্যাকেট (১০০ পিস করে) নিতে পারবেন। তবে ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন নেয়া যাবে ইচ্ছামতো।
সূত্র আরও জানায় ৮ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটি ব্যতীত প্রতি কার্যদিবসে ব্যাংকে লেনদেন চলাকালীন নতুন নোট বিনিময় হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নোট বিতরণ করা হবে। এতে একজন গ্রাহক একবারই নোট বিনিময়ের সুযোগ পাবেন। এছাড়া সারাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য শাখা অফিসের নির্ধারিত কাউন্টার থেকেও নোট বিনিময় করা যাবে।
যেসব ব্যাংকে মিলবে নতুন নোট ন্যাশনাল ব্যাংকের যাত্রাবাড়ী শাখা, জনতা ব্যাংকের আব্দুল গণি রোড করপোরেট শাখা, অগ্রণী ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখা, সিটি ব্যাংকের মিরপুর শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) শাখা, উত্তরা ব্যাংকের চকবাজার শাখা, সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখা, ঢাকা ব্যাংকের উত্তরা শাখা, আইএফআইসি ব্যাংকের গুলশান শাখা, রূপালী ব্যাংকের মহাখালী শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখা, জনতা ব্যাংকের রাজারবাগ শাখা, পূবালী ব্যাংকের সদরঘাট শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ শাখা, ওয়ান ব্যাংকের বাসাবো শাখা, ইসলামী ব্যাংকের শ্যামলী শাখা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের দক্ষিণ খান এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শাখা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বনানী শাখা, ব্যাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখায় নতুন টাকা পাওয়া যাবে।
এসআই/এসআর/এমএমজেড/জেআইএম