ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) সম্মেলনে যোগ দিতে অস্ট্রিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দেশটিতে প্রধানমন্ত্রীর এ দ্বিপক্ষীয় সফর বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম অস্ট্রিয়া সফর।
Advertisement
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ও মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ বিশ্বশান্তি রক্ষা, নিরস্ত্রীকরণ এবং সব ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থানকে পুনর্ব্যক্ত করবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। এছাড়া পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার কীভাবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে তা প্রকাশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ অন্যান্য স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের রোল মডেলরূপে পরিগণিত হতে পারে।
Advertisement
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইএইএর সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের রুপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালিত হবে।
তিনি জানান, সফরকালে প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রিয়ার ফেডারেল চ্যান্সেলর ক্রিস্টিয়ান কার্নের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বৈঠকে কৃষি ও প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা, দু’দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল, নিয়মিত কূটনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা হবে।
পাশাপাশি বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় যেমন- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ও নিরোধ, অভিবাসন, উদ্বাস্তু সংকট, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোপে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
মন্ত্রী জানান, নিয়মিত কূটনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরেরও সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রিয়ার ফেডারেল প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভ্যান ডের ব্যালেনের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
Advertisement
এই সফরের ফলে অস্ট্রিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর অস্ট্রিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কসহ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের নীতি গ্রহণ করেন। সেই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী ও বিস্তৃত ২০১৪ সালে দেশটিকে দূতাবাস স্থাপন করে বাংলাদেশ।
আইএইএর প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৯-৩০ মে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন দ্য আইএইএ টেকনিক্যাল কো-অপারেশন প্রোগ্রাম: সিক্সটি ইয়ারস অ্যান্ড বিয়ন্ড— কন্ট্রিবিউটিং টু ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংস্থাটির মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানোর আমন্ত্রণে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সম্মেলনে আফ্রিকা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল হতে একজন করে রাষ্ট্র অথবা সরকারপ্রধান অংশ নেবেন বলে আশা করছে আয়োজক সংস্থা। ইতোমধ্যে, মরিশাস ও উরুগুয়ের রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।
১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে যে গুটিকয়েক ইউরোপীয় দেশ স্বীকৃতি দিয়েছিল তার মধ্যে অস্ট্রিয়া অন্যতম। ওই প্রক্রিয়ায় অস্ট্রিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বা ফেডারেল চ্যান্সেলর ব্রুনো ক্রিয়েস্কি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এজন্য ২০১২ সালে তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ দেয় বাংলাদেশ।
জেপি/এমএস