সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসের আদলে গড়া ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।
Advertisement
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ১৪০-১৫০ জনকে।
শুক্রবারের ঘটনার জন্য ওই রাতেই বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোফাচ্ছারুল ইসলাম। মামলাটি তদন্ত করছেন শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মীর্জা মো. বদরুল হাসান।
যোগাযোগ করা হলে বদরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ভাস্কর্য অপসারণকে কেন্দ্র করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উচ্চ আদালত এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উচ্চ আদালতে প্রবেশের চেষ্টা করে কতিপয় যুবক। তারা পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দেয় ও হামলার চেষ্টা চালায়।
Advertisement
এসআই মীর্জা মো. বদরুল হাসান আরও বলেন, রাতেই তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে কর্তব্য কাজে বাধা ও গুরুতর জখমের অভিযোগে ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৫৩ ৩৬০, ৪২৭ পেনাল কোডে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় আটককৃতদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গতকালই ঘটনাস্থল থেকে লিটন নন্দী, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম কর্মী আরিফ নূরসহ ৪ জনকে আটক করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। এরপর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়।
গেল কয়েকমাস ধরেই ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল হেফাজতে ইসলাম।
Advertisement
শুক্রবার ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও জলকামান থেকে জল ছিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এদিকে একই দিনে জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ধর্মীয় সংগঠনগুলো। সেখান থেকে ভাস্কর্য অপসারণের বিরোধিতাকারীদের আল্লাহ-রাসূলের ‘শত্রু’ আখ্যায়িত করা হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহসচিব এ টি এম হেমায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল মক্কায় মূর্তি অপসারণের মধ্যে দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ঢাকা শহর মসজিদের শহর। এ শহরে মূর্তি থাকতে পারে না। হাইকোর্টের মতো জায়গায় অন্য ধর্মের মূর্তি কোনোভাবে থাকতে পারে না।’
সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার ঘটনাটি ভালোভাবে নেননি এর ভাস্কর মৃণাল হকও। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এরপর নির্দেশ আসবে, ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাঙা হোক, ‘রাজু ভাস্কর্য’ ভাঙা হোক, ‘ঘোড়ার গাড়ি’ ভাঙা হোক.. মাফ চাই। আমি কিছু বলতে চাই না। আমার হাত-পা বাঁধা।’
জেইউ/এনএফ/এমএস