আইন-আদালত

মিডিয়া না থাকলে আরও প্রশ্ন ছিল প্রধান বিচারপতির

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। মিডিয়া না থাকলে আরও কিছু প্রশ্ন তাকে করতেন বলেও শুনানিতে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।

Advertisement

আদালত বলেন, ‘মিস্টার অ্যাটর্নি জেনারেল, আরও কিছু প্রশ্ন ছিল। মিডিয়ার (সংবাদকর্মীদের) উপস্থিতির কারণে বেশ কিছু প্রশ্ন করলাম না।’

বিভিন্ন দেশের সংবিধান, বিচার বিভাগ ও আইন-আদালত এবং প্রধান বিচারপতির উদাহরণ টেনে আদালত বলেন, ওইসব দেশকে অনুসরণ করা উচিৎ আমাদের।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার শুনানির (লিখিত বক্তব্য) কিছু শব্দের ব্যবহার দেখে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। কিন্তু মিডিয়ার উপস্থিতির কারণে সেসব প্রশ্ন করতে পারলাম না। কারণ, এসব প্রশ্ন মিডিয়ায় চলে যেতে পারে। কোর্ট উঠলে পরে এসে এই আপত্তিকর শব্দগুলো সংশোধন করবেন।’

Advertisement

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনারা এগুলো নোট করে রাখেন পরে আমরা সংশোধন করে নেব।’

এরআগে আজ মঙ্গলবার সকালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর ওপর পঞ্চম দিনের মতো শুনানি শুরু হয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে।

রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম লিখিত যুক্তিতর্কের ওপর আদালতে শুনানি করছেন।

এর আগে গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর ৯ মে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। এ দু’দিন রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা হাইকোর্টের রায়ের ওপর আদালতে শুনানি করেন।

Advertisement

এরপর ওইদিনই আদালতে চারজন অ্যামিকাস কিউরি তাদের লিখিত মতামত জমা দেন। এই চারজন হলেন- সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, এম আই ফারুকী ও আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া।

তার আগে ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য ১২ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ।

অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ আইনজীবী হচ্ছেন- বিচারপতি টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, এম আই ফারুকী।

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা ফের সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। এরপর তা ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫ মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। তিন বিচারকের মধ্যে একজন রিট আবেদনটি খারিজ করেন।

এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের রায় প্রকাশিত হয় গত ১১ আগস্ট এবং রিট খারিজ করে দেয়া বিচারকের রায় প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। দুটি মিলে মোট ২৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।

এফএইচ/এনএফ/জেআইএম