সিলেটের বিয়ানীবাজারে ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের এক শিশু কন্যাকে বিচার পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে আটকে রেখে তার ওপর আবারও যৌন নির্যাতন করেছেন এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
Advertisement
এ ঘটনায় রোববার ভোর ৫টায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯, স্পেশাল কোম্পানী, সিলেট ক্যাম্পের একটি বিশেষ দল বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউলগ্রামে অভিযান চালিয়ে সারোয়ার আহমেদ (৩৫) নামের ওই লন্ডন প্রবাসীকে আটক করে।
এ সময় ওই বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের সদস্য ও র্যাব জানায়, কানাইঘাট উপজেলার এরালিগুল গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের ছোট মেয়ে ওই শিশুটি। পরিবারের বড় ছেলে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর গ্রামের প্রভাবশালীরা তাদের গ্রামছাড়া করেন।
Advertisement
এ সময় ওই ব্যক্তি তার স্ত্রী ও এক শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। তবে ১২ বছরের ওই কন্যাশিশুকে নিরাপত্তার জন্য বড় ভাইয়ের কাছে রেখে যান। পরে বড় নিজেও স্ত্রী ও অপর শিশু সন্তানকে নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউলগ্রামের লন্ডন প্রবাসী সারোয়ার আহমেদের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বলেন, বিয়ানীবাজারে যাওয়ার কয়েক দিন পর প্রবাসী সারোয়ারের চাচাতো ভাই সামসুদ্দিনের ছেলে জমির উদ্দিন কৌশলে আমার মেয়েকে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে উপজেলার ছোটফৌজ গ্রামের মুজির উদ্দিন ও নারাইনপুর গ্রামের আজির উদ্দিনকে নিয়ে জমির শিশুটির ওপর পালাক্রমে যৌন নির্যাতন করে। পরে তারা আরও বেশ কয়েক দিন তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
শিশুটির বাবা আরও জানান, একপর্যায়ে মেয়ে বিষয়টি তাকে জানালে গত ২৭ এপ্রিল তিনি শিশুটিকে নিয়ে লন্ডন প্রবাসী সারোয়ারের সাহায্য চান। তিনি সাহায্যে এগিয়ে এসে ২৯ এপ্রিল শিশুটিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা শিশুটির ওপর যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পান এবং চিকিৎসা শেষে ৩০ এপ্রিল থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন। কিন্তু অভিযোগ দায়ের করার ক্ষেত্রে বাধ সাধেন সারোয়ার। তিনি মেয়েটিকে তার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান।
ধর্ষিতার বাবা আক্ষেপ করে বলেন, যার কাছে আশ্রয় নিলাম, সেই সারোয়ার কয়েক দিন পর আমার শিশু মেয়েটির ওপর পাশবিক নির্যাতন শুরু করেন। শিশুটি আবারও বিষয়টি তার মায়ের কাছে জানালে, ধর্ষণের বিষয়টি সারোয়ারের মা ও স্ত্রীকে জানানো হয়।
Advertisement
এ নিয়ে সরোয়ারের সঙ্গে তার স্ত্রীর পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সারোয়ার স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়িতে। এরপর তিনি শিশুটিকে রেখে দেন তার নিজ ঘরে। শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা-মা বাড়ি চলে যেতে চাইলে তাদের ওপর নির্যাতন চালান সরোয়ার। সবশেষ নির্যাতনের মাত্রা এতটাই প্রকট হয় যে, মেয়েটিকে রেখেই পালিয়ে আসেন তারা।
পরে তিনি দেউলগ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমেদ বিষয়টি জানান। এরপর এ ব্যাপারে র্যাব-৯ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
রোববার দুপুরে র্যাব ৯-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র এএসপি মাইন উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভিকটিম ও তার মা কানাইঘাট থেকে কাজের সন্ধানে বিয়ানীবাজারে আসে এবং বিয়ানীবাজারে ভিকটিম লন্ডন প্রবাসী সারোয়ারে বাড়িতে কাজে নেয়।
একপর্যায়ে অভিযুক্ত সারোয়ার ভয় দেখিয়ে শিশু ভিকটিমকে বেশ কয়েকদিন ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে আসছিল। এ ঘটনা জানার পর ভিকটিমের পরিবার সারোয়ারের বাসা থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে উল্টো তাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় সারোয়ার।
গুরুতর আহত অবস্থায় নির্যাতিতার মা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার ভোরে সারোয়ারকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতার আসামি সারোয়ার আহমেদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়ার এজাহার প্রস্তুতিসহ তাকে বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
নির্যাতিত শিশুটি জানায়, হাত-পা বেঁধে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় চাচাতো ভাই জমির উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তারা ছাড়েনি। কাউকে বললে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। সেখান থেকে মুক্ত হয়ে সারোয়ারের যৌন নির্যাতনের শিকার হয় সে। বিষয়টি সারোয়ারের মা এবং স্ত্রীকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানায় শিশুটি।
এ প্রসঙ্গে রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্ত্তী জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আর আসামিকে র্যাব এখনো বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করেনি। অভিযোগ পেলে বিস্তারিত বলতে পারব।
ছামির মাহমুদ/এএম/আরআইপি