মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাসংস্থার তৈরি হ্যাকিং টুল চুরির পর; এই টুল ব্যবহার করেই বিশ্বজুড়ে একযোগে সাইবার হামলা হ্যাকাররা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন সাইবার গবেষকরা। বিশ্বের প্রায় একশ দেশে হ্যাকারদের একযোগে চালানো এ হামলায় ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সংস্থা ফেডেক্স’র কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বিশ্বের শতাধিক দেশে।
Advertisement
হ্যাকারদের ছড়ানো ম্যালওয়ার সফটওয়্যারের মাধ্যমে সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা। হ্যাকারদের ছড়ানো স্প্যামের মাধ্যমে চাকরির প্রস্তাব, চালান, নিরাপত্তা সতর্কতা ও অন্যান্য ফাইলের নিরাপত্তার প্রস্তাব দেয়া হয়। এই স্প্যাম লিঙ্ক ওপেনের পরপরই হ্যাকারদের দখলে যায় কম্পিউটার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, বিশ্বের প্রায় ৫৭ হাজার কম্পিউটার সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রোগ্রাম র্যানসমওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের পর ৩০০ থেকে ৬০০ ডলার পর্যন্ত দাবি করেছেন হ্যাকাররা। তারা বলেছেন, এই অর্থ বিটকয়েনের মাধ্যমে পরিশোধ করা হলে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারকারীকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামলার শিকার কিছু ব্যক্তি বিটকয়েনের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। তবে সাইবার জালিয়াতি চক্রকে কী পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে তা জানা যায়নি। নিরাপত্তা সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাভাস্টের গবেষকরা বলছেন, তারা অন্তত ৯৯ দেশের ৫৭ হাজার কম্পিউটারে হামলার তথ্য পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে রাশিয়া, ব্রিটেন, তাইওয়ান ও ইউক্রেনে।
Advertisement
তবে এই সাইবার হামলায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ব্রিটেন। কম্পিউটার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর দেশটির হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো থেকে রোগীদের ফেরত দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সেবাদাতা সংস্থা ফেডেক্স বলছে, তাদের বেশকিছু উইন্ডোজ কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, আমরা যত দ্রুত সম্ভব প্রতিকার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতর বলছে, শুক্রবার রাতে তারা র্যানসমওয়ারের হামলার বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারগুলোকে তথ্য ও প্রযুক্তিগত যেকোনো ধরনের সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।
বেশকিছু ব্যক্তিগত সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের গবেষক বলেছেন, হ্যাকাররা এই হামলার দায় স্বীকার না করায় মনে হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম ম্যালওয়ারের কারণে সাইবার হামলা হয়েছে। মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দাসংস্থা এনএসএ’র তৈরি এ ধরনের একটি কোড গত মাসে শ্যাডো ব্রোকারস নামের একটি গোষ্ঠী ফাঁস করে দেয়।
মার্কিন নিরাপত্তাসংস্থা এনএসআই’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ান্নাক্রাই’র হুমকি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপ্লাঙ্কের পরিচালক রিচ বার্গার বলেছেন, এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় র্যানসমওয়্যার হামলা; যা সাইবার কমিউনিটি এর আগে কখনোই দেখেনি। শ্যাডো ব্রোকারস হ্যাকিং টুলস ‘এটারনাল ব্লু’ ফাঁসের পর জানায় এই টুল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রয়েছে।
Advertisement
সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা।
এসআইএস/এমএস