উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে দেশের বেশ কয়েকটি হাওরাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে বেশ তৎপর ছিল বিএনপি। দলটির নেতারা কয়েক দফা হাওরের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। দিয়েছেন ত্রাণসহায়তাও।
Advertisement
তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হাওর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে যাবেন কিনা- এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে অন্ধকারে রাখছে দলটি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা সুস্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওর অঞ্চল পরিদর্শনে এরই মধ্যে সুনামগঞ্জে অবস্থান করছেন। রোববার সকাল সোয়া ১০টার তিনি সেখানে পৌঁছান।
অন্যদিকে বিশ্বস্ত একটি সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন হাওর অঞ্চলে যাবেন না।
Advertisement
বিষয়টি নিয়ে রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের মুখে পড়েন নেতারা।
খালেদা জিয়া হাওর অঞ্চলে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
‘আজ প্রধানমন্ত্রী হাওর পরিদর্শনে গেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যাবেন কিনা’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন দুর্গত এলাকার মানুষকে সাহায্য করার জন্য কমিটি করে দিয়েছেন। আমাদের নানা টিম সেখানে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই তিনি আলাপ-আলোচনা করবেন। সেটা আপনাদের জানাব। কথা হলো সরকারের সব মেশিনারিজ যার হাতে, ত্রাণের ভাণ্ডার যার হাতে, তিনি এতদিন পরে যাচ্ছেন কেন? সব এলাকা যখন বিলীন হয়ে গেছে। সর্বত্র মানুষের আর্তচিৎকার, কাঁদছে ক্ষুধার জ্বালায়; তখন প্রধানমন্ত্রী আজ যাচ্ছেন সেখানে।’
Advertisement
রিজভী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রায় মাসখানেক হলো, কিন্তু আজ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেখানে যাচ্ছেন, দেখতে যাচ্ছেন, মানুষ কতটুকু দুর্ভিক্ষের জ্বালায় কাতরাচ্ছেন। সেটি কি দেখতে যাচ্ছেন নাকি মানুষের সঙ্গে উপহাস করতে যাচ্ছেন! যত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সব পরিবারকে তিনি অ্যাড্রেস করেননি। তারা সেই ত্রাণ পাচ্ছে না। এটা শুধু আমাদের বক্তব্য না, গণমাধ্যমেও এসেছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজনদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তারা তালিকা করবেন। বেছে বেছে তালিকা করবেন। আওয়ামী লীগের পছন্দসই লোকদের তালিকাভুক্ত করবেন। জনসমর্থিত সরকার থাকলে এ ধরনের দলমনষ্ক কাজগুলো করতেন না। এ কাজগুলো করছে বলেই আজ সব হাওর পাড়ের লোকেরা বিপন্ন জীবন-যাপন করছে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনযাপন করছে। হাওর এলাকায় যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, এজন্য দায়ী আওয়ামী লীগ সরকার।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাওর অঞ্চল পরিদর্শনে যাবেন কিনা- জানতে চাইলে তার মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনও পাইনি।’
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাওর অঞ্চল পরিদর্শন সম্পর্কে সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, চেয়ারপারসন হাওরের দুর্গতদের দেখতে যাবেন কিনা- সে বিষয়ে জানি না। তবে আমরা সোমবার যাচ্ছি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে আমরা ত্রাণ বিতরণ করব।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ড. নুরুল আমীন বেপারী জাগো নিউজকে বলেন, দুর্গত ওই অঞ্চলের মানুষদের দেখতে সবারই সেখানে যাওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীর আরও আগে সেখানে যাওয়া উচিত ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসনেরও সেখানে যাওয়া উচিত।তিনি আরও বলেন, মানুষের জন্যই গণতন্ত্র। এ সংকটের সময় জনগণের পাশে থাকা উচিত। পাশাপাশি কি কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো সেটিও খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
‘আমরা ভাটির দেশের লোক। উজান থেকে পানি আসবেই। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করা উচিত’- মন্তব্য করেন এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
এমএম/এসআর/এমএআর/জেআইএম