ফিচার

সিএনজি চালকের অভিনব উদ্যোগ

গতকাল (শনিবার) রাতের ঘটনা। পান্থপথ থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে সিএনজিতে উঠলাম। সিএনজিতে উঠেই দেখলাম উপরে ফ্যান ঘুরছে। ভাবলাম- যাক ভালোই হলো, একটু আরামে যাওয়া যাবে! কিন্তু আস্তে আস্তে আরো অনেক কিছুই আবিষ্কার করতে থাকলাম। যেমন- টিউবলাইট, ছাতা, কাগজ-কলম ইত্যাদি।

Advertisement

সিএনজি চালককে কারণ জিজ্ঞেস করতেই এক এক করে সবকিছুই বলতে থাকলো, ‘মামা ফ্যানটা আসলে ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধ মানুষ এবং অসুস্থ রোগির জন্য লাগিয়েছি। জ্যাম আর গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে যায়। কিছুদির পর আরো গরম পড়বে তখন বেশি প্রয়োজন হবে। আর বৃষ্টির মৌসুম তো তাই ছাতা রাখছি।

এবার একটু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে এই খাতা-কলম কেনো?’ তিনি বললেন, ‘অনেক সময় যাত্রীরা মোবাইলে কথা বলার সময় কারো মোবাইল নম্বর লেখার প্রয়োজন হয়। তখন কিছুই পাওয়া যায় না, তাই রাখছি।’ উনি আরো বললেন, ‘মোবাইল, ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখছি।’

সত্যিই তো তাকিয়ে দেখি- স্মার্ট ডিভাইসগুলো চার্জ দেওয়ার একটা সিস্টেম করা আছে। তবে ল্যাপটপ চার্জ দেওয়ার সিস্টেম ছিলো না। সিএনজির ছাদে লাগানো সান-প্রোটেকটেড কভার দেখিয়ে বলল, ‘এটা লাগিয়েছি যেন যাত্রীদের রোদের তাপ বেশি না লাগে।’ আমি মজা করার জন্য বললাম, ‘এতো কিছু করলেন কিন্ত মিউজিক সিস্টেম নেই কেন?’ সিএনজি চালক বললেন, ‘গান শোনার দরকার নাই। তবে খবর দেখা বা শোনার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো। কি বলেন?’

Advertisement

আমি তার চিন্তাশক্তি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। গলায় ঝোলানো আইডি কার্ডটা দেখিয়ে বললেন, ‘এটা নীলক্ষেত থেকে করেছি। একশ’ টাকা লাগছে। এটাতে আমার এবং বাসার অন্য সবার মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। যদি কখনো দুর্ঘটনায় পড়ি, তাহলে যেন আমার বাসার মানুষ খবরটা পায়। এজন্য এটা করিয়েছি।’

তিনি আরো জানালেন যে, কোনো যাত্রী চাইলেই তাকে বিকাশ, ইউক্যাশ কিংবা মোবাইল রিচার্জের মাধ্যমে সিএনজি ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন। আবার কারো কাছে টাকা না থাকলে পরে টাকা দেওয়ার কথা বলে মোবাইল নম্বর রেখে দেন।

‘কেউ যদি টাকা মেরে দেয়?’ প্রশ্নটা শুনে বললেন, ‘দু’বার এ রকম হয়েছিল। পরে ফোন করে বলেছিলাম, ভাই টাকা না দিলে আমার কোনো ক্ষতি নাই। তবে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। উত্তরে তারা জিজ্ঞেস করেছিল, কেন? আমি বলেছিলাম, আপনি টাকা না দিলে আর কাউকে টাকা না দিয়ে এক পা-ও এগোতে দেবো না। দেশের অনেক মানুষ আপনার জন্য এই সুবিধা আর পাবে না। এটা বলার পর তারা টাকা দিয়ে দিছে। আর খাইলে কতোই বা খাইতো? একশ’, দুইশ’ বা পাঁচশ’ টাকা।

সিএনজিটা মালিকের হলেও পুরো সেটআপ উনি নিজের বুদ্ধি এবং অর্থ খরচ করে করেছেন শুধু দেশের মানুষকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। তার এ উদ্যোগের প্রশংসা না করে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। সত্যিই একজন সিএনজি চালক দেখিয়ে দিচ্ছেন- ইচ্ছা থাকলে যেকোনো ভাবেই, যেকোনো স্থান থেকেই দেশের আর দেশের মানুষের সেবা করা যায়।(সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Advertisement

এসইউ/পিআর