আগামী বছরই স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত অগ্রগতির তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
Advertisement
উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তিনটি শর্তের দুটিই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তৃতীয়টির অগ্রগতিও ইতিবাচক। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সঙ্গে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে সিডিপির কাছে তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই দলের নেতৃত্ব দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলম। সফরসঙ্গী ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, জাতিসংঘের শর্ত মোতাবেক অর্থনীতির যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি প্রয়োজন বাংলাদেশ তা অর্জন করেছে। এ হিসাবে ২০১৮ সালের মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারি আমরা।
Advertisement
তিনি বলেন, জাতিসংঘের সদর দফতরের এক বৈঠকে সিডিপির কাছে বাংলাদেশের সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই বৈঠকে সিডিপির সভাপতি এনটোনিও হোসে ওকাম্পো উপস্থিত ছিলেন। সামগ্রিক তথ্য উপস্থাপনের পর বিষয়টি বিবেচনা (কনসিডার) করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তিনটি শর্তের মধ্যে মানবসম্পদ সূচকে কোন দেশকে ৬৬ বা এর চেয়ে বেশি পয়েন্ট অর্জন করতে হয়। আর অর্থনৈতিক ভঙুরতা সূচকে সংশ্লিষ্ট দেশের অবস্থান ৩২ পয়েন্ট বা এর নিচে থাকার শর্ত রয়েছে। আর উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নির্ধারিত গড় মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৪২ ডলার।
জিইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ৭০ পয়েন্ট অর্জন করেছে। অপুষ্টি, শিশু ও মাতৃমৃত্যু, মাধ্যমিক শিক্ষায় নিবন্ধন, বয়স্ক শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে মানবসম্পদ উন্নয়নের এ সূচক নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া অর্থনৈতিক ভঙুরতা সূচকেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট। সূচকটি নির্ভর করে কৃষি উৎপাদন, পণ্য ও সেবা রফতানি, প্রচলিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও জিডিপিতে সম্পূর্ণ পণ্য উৎপাদন ও আধুনিক সেবার অংশীদারিত্ব এবং ক্ষুদ্র অর্থনীতির প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের সাফল্যের উপর।
Advertisement
তৃতীয় শর্ত মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্য অর্জনেও যথেষ্ট অগ্রগতি রয়েছে বাংলাদেশের। উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নির্ধারিত গড় মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৪২ ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৫৬ ডলার।
বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশসহ ৪৮টি দেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) তালিকাভুক্ত। এলডিসি তালিকা নিয়ে সিডিপির সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০১৫ সালে। এ বিষয়ে পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ সালে। এ বৈঠকের মূল্যায়নে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত করতে সিডিপি মনোনীত করলে পরবর্তী তিন বছর এ তিন সূচকে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সফল হলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করবে ইকোসোক। সে সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ সভায় অনুমোদন পেলে ২০২৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
এমএ/এমএআর/এমএস