সিলেট মহানগরের শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ অপারেশন ‘টোয়াইলাইট’ শুরুর ৫৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অভিযান শেষ হয়নি। থেমে থেমে রোববার ভোর রাত থেকে বোমা ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
Advertisement
এদিকে, রোববার ভোর থেকে কদমতলি থেকে শিববাড়ি এলাকা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে মহানগর পুলিশ। আস্তানার এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ কারণে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় জঙ্গি আস্তানার ২০০ গজের মধ্যে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর থেকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
অভিযানস্থল এবং এর আশপাশের এলাকা পুরোপুরি কর্ডন করে রেখেছে সেনাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া শনিবার রাতে বোমা বিস্ফোরণস্থল সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ফিতা টানিয়ে সুরক্ষিত করে রেখেছে।
Advertisement
শনিবার ওই এলাকার আশপাশে উৎসুক জনতার প্রবেশে এত বেশি কড়াকড়ি না থাকলেও আজ কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রোববার সকাল সোয়া ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই জঙ্গি আস্তানার ভেতরে কতজন জঙ্গি আছে, তাদের কী অবস্থা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শনিবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, অভিযান চলমান রয়েছে, বাড়িটিতে বিস্ফোরক (আইইডি) পুতে রাখা হয়েছে। তাই বলা যাচ্ছে না অভিযান কখন শেষ হবে। অভিযান শেষ হলে টোয়াইলাইটে নেতৃত্ব দেয়া অপারেশন কমান্ডার সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করবেন এবং আমরা সাংবাদিকদের কিছু ছবিও দেব।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। বেলা সোয়া একটার মধ্যে ওই বাড়ির ২৯টি ফ্ল্যাটে আটকে পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করে আনেন সেনা সদস্যরা। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও ২১ জন শিশু রয়েছেন। তাদের পাঠানপাড়ার একটি দোতলা বাড়িতে রাখা হয়।
Advertisement
এসব ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচতলা বাড়িটিতে পুলিশের অভিযান শুরুর পর থেকে আটকা ছিল। এই বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গিরা অবস্থান করছে।
গত শুক্রবার দিনভর পুলিশ সন্দেহভাজন জঙ্গিদের দফায় দফায় আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিল। জঙ্গিরা তাতে সাড়া না দিয়ে ভেতর থেকে গুলি, বোমা ছোড়ে। তখন জঙ্গিদের ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে এক নারী চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘সোয়াট পাঠান, আমাদের সময় কম। তোমরা শয়তানের অনুসারী আর আমরা আল্লাহর পথে আছি।
শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেনের নেতৃত্বে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরু হয়।
পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট অভিযানে নিরাপত্তা সহায়তা করছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা মূল অভিযান চালাচ্ছেন। সকাল ৯টার দিকে অভিযান শুরুর পরপর হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি আসে। মেঘলা আকাশের কারণে এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টি থামে।
অপারেশন টোয়াইলাইট শুরুর আগে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
অপারেশন শুরুর পর থেকে গতকাল শনিবার ও আজ রোববার থেমে থেমে গুলি-বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে পরপর একর পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান ও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় চালানো অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন সিলেটের জালালাবাদ থেকে যাওয়া সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে সিলেট নগরের উপকণ্ঠ টিলাগড়ের শাপলাবাগ এলাকার ‘সূর্যদীঘল’ বাড়ি থেকে জেএমবির তৎকালীন আমির শায়খ আবদুর রহমানকে অনেক নাটকীয়তার পর আটক করেছিল র্যা ব।
আরএআর/এমএস