বিশেষ প্রতিবেদন

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণে নিজস্ব স্যাটেলাইট এখন সময়ের দাবি

‘আবহাওয়া অধিদফতরের উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে পারলে দুর্যোগ প্রশমন ও ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে’ বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও জাতিসংঘের আবহাওয়াবিষয়ক সংস্থার (ডব্লিউএমও) স্থায়ী প্রতিনিধি সামছুদ্দিন আহমেদ।

Advertisement

বিশ্ব আবহাওয়া দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবুর মুখোমুখি হন তিনি।

জাগো নিউজ : আজ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। আবহাওয়ার তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কি পরিকল্পনা বা উদ্যোগ নিতে পারলেন?  সামছুদ্দিন আহমেদ : মানুষ আগে গণমাধ্যম, টেলিফোন, ফ্যাক্স কিংবা ইমেইলের মাধ্যমে আবহাওয়ার তথ্য পেত। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরি করেছি, যা গত ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। আগে আকাশ, নৌ ও সমুদ্রপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষ আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করত। এখন আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের কারণে আবহাওয়ার তথ্য প্রতিটি মানুষের কাছে প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে।একজন বিমানচালক যেমন আবহাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করেন, তেমনি একজন কৃষকের জন্যও আবহাওয়ার তথ্য প্রয়োজন। এ কারণে আবহাওয়া অধিদফতরকে বহুমাত্রিক সেবা নিশ্চিত করতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ : মোবাইল অ্যাপসের কথা বললেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?সামছুদ্দিন আহমেদ : এটি একটি জীবনঘন অ্যাপস। সাড়া পাচ্ছি বটে। তবে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ অ্যাপসের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ সাড়া পাওয়ার কথা তা মিলছে না। কোথাও মনে হয় ঘাটতি আছে।

Advertisement

জাগো নিউজ : প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে গোটা বিশ্বে। আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ ও প্রদানে আপনাদের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি?সামছুদ্দিন আহমেদ : আবহাওয়া অধিদফতর পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আমাদের সমুদ্রসীমায় তিনটি অত্যাধুনিক পর্যবেক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করা হবে। যেখান থেকে মুহূর্তের মধ্যে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।দেশে মোট ৪৭টি পর্যবেক্ষণ স্টেশন রয়েছে। কিন্তু মানুষের চাহিদা অনুসারে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্টেশন স্থাপন প্রয়োজন। ইতোমধ্যে আমরা ২০০টি উপজেলায় স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষ স্থান ও সময়ভিত্তিক আবহাওয়ার তথ্য পেতে চায়। এটি করতে হলে আমাদের সুপার কম্পিউটার দরকার। এ সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পে।

জাগো নিউজ : আধুনিকায়নের কথা বলছেন। এরপরও মানুষ আবহাওয়া ব্যবস্থাকে সেকেলে মনে করে?সামছুদ্দিন আহমেদ : দেখুন, গত এক বছরে বিদেশের প্রায় ৪০ হাজার বৈমানিক আমাদের কাছ থেকে আবহাওয়ার তথ্য নিয়েছেন। আমাদের তথ্য যদি সেকেলেই হত, তাহলে বৈমানিকরা এভাবে আস্থা রাখতে পারতেন না।

সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেয়ার ক্ষেত্রে গত দশ বছরে বিশেষ কোনো ভুল হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য নেই। যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তার সবই সঠিক ছিল। পূর্বাভাসের মানের উন্নয়নের কারণেই সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমেছে। এরপরও কিছু অসঙ্গতি থাকতে পারে। পূর্বাভাসে হয়তো বলা হয়েছিল ভারি বর্ষণের কথা কিন্তু হয়েছে হালকা বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টি একেবারেই হয়নি, এমনটি কম ঘটেছে।

জাগো নিউজ : আবহাওয়া তথ্যের সেবা অনেকটা ঢাকাকেন্দ্রিক। মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে কি করণীয় বলে মনে করেন?সামছুদ্দিন আহমেদ : আমরা পর্যবেক্ষণ স্টেশনগুলো ঢেলে সাজাচ্ছি। সবাই যেন স্থানীয় স্টেশন থেকেই মৌলিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারেন, তার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমরা স্যাটেলাইট ব্যবহার করেই আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা স্বয়ংক্রিয় পর্বেক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করছি। এগুলোই আধুনিক মাধ্যম। আমরা জাপানের স্যাটেলাইট ব্যবহার করে আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করি। আমাদের নিজস্ব কোনো স্যাটেলাইন নেই। একেকটি ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং তা ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। টেকসই উন্নয়ন করতে হলে আবহাওয়া অধিদফতরের উন্নয়ন জরুরি।

Advertisement

জাগো নিউজ : অন্য দেশের তুলনায় আমাদের আবহাওয়া নিয়ে কি বলবেন?সামছুদ্দিন আহমেদ : আমরা ট্রপিক্যাল এলাকার মধ্যে অবস্থান করছি। এখানে আবহাওয়া মুহূর্তেই বদলে যায়। মিরপুরে ভারি বৃষ্টি হলে, মতিঝিলে কোনো বৃষ্টির দেখা মেলে না। এমনটি পৃথিবীর অনেক দেশেই হয় না। যেমন- নরওয়ে এবং এর আশপাশের দেশগুলোতে আবহাওয়ার একপ্রকার স্থির বার্তা মেলে। আমরা সংখ্যাতাত্ত্বিক বার্তা পাওয়ার জন্য সুপার কম্পিউটার সংযুক্ত করতে যাচ্ছি।

জাগো নিউজ : আবহাওয়া-জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। এ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?সামছুদ্দিন আহমেদ : জলবায়ু বা আবহাওয়ার পরিবর্তন নিত্যদিনই ঘটছে। কিন্তু এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব কোনো তথ্য ভাণ্ডার নেই, গবেষণাও নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হলে সবার আগে আমাদের এ সেক্টর নিয়ে গবেষণা এবং প্রচুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা দরকার।

তবে নামমাত্র কোনো গবেষণা নয়, দায়িত্ব নিয়ে গবেষণা করেই দেশ-জাতির কল্যাণ সম্ভব বলে মনে করি।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি