ধর্ম

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ইসলামি স্থাপনা চাটগছার আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদের সঙ্গে মোগলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের কাহিনি সম্পর্কিত। এ কেল্লায় এক সময় মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল বলে কথিত আছে।১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের তৎকালীন মোগল শাসনকর্তা শায়েস্তা খাঁর ছেলে উমেদ খাঁ এ কেল্লার ভেতরে প্রবেশ করলে তখন থেকে এর নাম হয় ‘আন্দরকিল্লা’।মসজিদের ইতিহাসপরবর্তীতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দ আরবি ১০৭৮ হিজরিতে মোগলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে জলদস্যুদের আস্তানায় মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদের নামকরণ করেন ‘আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ’।৫৬ বছর পর চট্টগ্রামের আরেক শাসনকর্তা নবাব ইয়াসিন খাঁ ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সন্নিকটে পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি টিলার ওপর আরেকটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করেন। যার নাম রাখেন ‘কদম রসুল’।এক সময় আন্দরকিল্লা মসজিদের চেয়ে কদম রসুল মসজিদটি গুরুত্ব পেতে থাকে আর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি  মুসল্লি ও গুরুত্ব হারাতে থাকে। একপর্যায়ে আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদটি লোকশূন্য হয়ে পড়ে।এ সুযোগে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটিকে তাদের গোলাবারুদ রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীতে ১১৫ বছর পর হামিদুল্লাহ খাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদের নামাজের জন্য আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি আবারও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।১৬৬৭ সাল থেকে এ মসজিদ ঘিরে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপক আনাগোনা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওলাদে রাসুলগণই এ মসজিদের ইমাম নিযুক্ত হতেন। যার ধারাবাহিকতা এখনও বিদ্যমান। বর্তমানে এ মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন আওলাদে রাসুল আল্লামা আনোয়ার হোসানইন তাহের জাবেরি আলমাদানি।আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ চট্টগ্রামসহ তার আশপাশের মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার মসজিদে রূপ নেয়। বিশেষ করে জুমআর নামাজ পড়তে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা উপস্থিত হন।রোজা, ফিতরা এবং ঈদের চাঁদ দেখা প্রশ্নে এই মসজিদের ফয়সালা চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ আন্তরিকভাবেই মেনে নেন।আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের স্থাপত্য ও গঠন মোগল রীতি অনুযায়ী তৈরি। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উপরে ছোট্ট পাহাড়ের ওপর মসজিদটির অবস্থান।নকশা অনুযায়ী মূল মসজিদটি ১৮ গজ (১৬ মিটার) লম্বা, ৭.৫ গজ (৬.৯ মিটার) চওড়া এবং প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২.৫ গজ (২.২ মিটার) পুরু। পশ্চিমের দেয়ালটি পোড়া মাটির তৈরি এবং বাকি তিনটি দেয়াল পাথরের তৈরি। মসজিদের ছাদ মধ্যস্থলে একটি বড় গম্বুজ এবং দুটি ছোট গম্বুজ দ্বারা আবৃত।১৬৬৬ সালে নির্মিত এর চারটি অষ্টভূজাকৃতির বুরুজগুলোর মধ্যে পেছনের দিকে দুটি বুরুজ বর্তমানে বিদ্যমান। মসজিদটির পূর্বে তিনটি, উত্তর এবং দক্ষিণে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। মসজিদের ভেতরে তিনটি মেহরাব রয়েছে। তবে মাঝের সবচেয়ে বড় মেহরাবটিই এখন ব্যবহৃত হয়।চট্টগ্রামে মুসলিম বিজয়ের স্মারকস্বরূপ কালে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদটি। এ মসজিদের মূল ভবনের প্রবেশ পথে কালো পাথরের খোদাই করে সাদা অক্ষরে ফার্সি ভাষায় যা লেখা রয়েছে। তা বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়- ‘হে জ্ঞানী! তুমি জগৎবাসীকে বলে দাও, আজ এ দুনিয়ায় ২য় কাবা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার প্রতিষ্ঠাকাল ১০৭৮ হিজরি। এখানেই খোদাই করা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠার নামও।এমএমএস/আরআইপি

Advertisement