ভারত বিশ্বে এক নম্বর দল। ওদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ আছে। যা শুনলাম হায়দারাবাদের উইকেট টার্নিং উইকেট। ওদের ভালো স্পিনারও আছে, আমাদেরও আছে। তবে আমার মনে হয় খেলাটা হবে আসলে বোলিংয়ে। বোলিং আর ফিল্ডিংই মূল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের ব্যাটিংটাও যথেষ্ট শক্তিশালী। ব্যাটসম্যানরা ছন্দে থাকলে ভালো কিছুই হবে। আর তার সঙ্গে যদি টসটা জিতে যায় তাহলে ব্যাটিং করা উচিত। প্রথমে ব্যাটিং করলে কোনো বিশেষ টার্গেট বা চাপ থাকবে না। সেক্ষেত্রে যদি প্রথম দেড়দিন ব্যাটিং করতে পারি তাহলে ড্রয়ের চিন্তা করা যাবে। জয়ের চিন্তা থেকে দূরে থাকাই ভালো। ড্রয়ের ভাবনাই বেশি ভালো হবে।আমাদের বোলিং ডিপার্টমেন্টটা একটু দুর্বল। দেখা যাচ্ছে মিরাজ ওদের জন্য নতুন। তাসকিন, রাব্বি, শুভাশিস প্রায় সবাই নতুন। তবে আমার কাছে মনে একটা ফিট দল পেতে যাচ্ছে। এটা অনেক বড় কথা। তিন-চার ওভার পর কেউ ইনজুরিতে পরে গেল এমন খেলোয়াড় দলে কেউ নাই। মুমিনুলের হয়তো হালকা সমস্যা আছে। আর পাঁচদিনের টেস্টে ফিটনেস অনেক বড় ব্যপার। আর বাংলাদেশের এ তরুণদের উপর আস্থা রাখা উচিৎ। তাসকিন-মিরাজদের সঙ্গে সাকিব আছে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে। আমাদের পার্টটাইম বোলারদের টেস্টে তেমন ব্যবহার করা হয় না। তবে ভেরিয়েশনের জন্য কাজে লাগানো উচিৎ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিন্তু ভালো বল করে। ওকে বল করানো উচিৎ।ওদের ব্যাটিং বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইন আপ। তবে আমাদের ব্যাটিং কিন্তু খারাপ না। সাকিব, মুমিনুল, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক আমাদের মূল ব্যাটিং স্তম্ভ। আমাদের সাতজন মূলসারির ব্যাটসম্যান আছে। তবে ওদের যেমন রবীন্দ্র জাদেজা কিংবা রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিন্তু সাত-আট নম্বরে নেমে দেখা যায় ভালো স্কোর করে ফেলে। এটাকে ওরা অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে যে টেলঅ্যান্ডার দিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে ফেলছে।টস একটা বড় ভূমিকা পালন করবে। টস জিতে ব্যাটিং নিলে চতুর্থ ইনিংসের চাপটা নিতে হবে না। তখন দেখা যাবে চতুর্থ ইনিংসে চেজ বা টিকে থাকার চাপটা নিতে হবে না। যেহেতু স্পিন উইকেট দেখা যাবে সাড়ে তিনদিন কিংবা চারদিনের মাথায় ভেঙে যাবে।আমাদের ব্যাটসম্যানরা সবসময়ই একটু আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে খেলে। এটা কিন্তু খুব স্বাভাবিক। কারণ আমাদের খেলোয়াড়রা টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খুব কম খেলে। ভারতেই দেখেন ওরা রঞ্জি ট্রফি কিন্তু নিয়মিতভাবে ব্যাপক আকারে খেলে। আর আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটার ওই ধরনের উন্নতি হচ্ছে না। আমাদের খেলোয়াড়রা বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ কম খেলায় ওই ধরনের টেম্পারমেন্টটা নাই। তাই প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আরও বাড়ানো উচিৎ। কারণ এতেই আমাদের ব্যাটসম্যানদের টেম্পারমেন্ট বাড়াবে। এই দিকে আমরা খুব দুর্বল অবস্থায় আছি।আমাদের প্রত্যেকটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রভাব পড়বে ঘরোয়া ক্রিকেটের উপরে। যেমন আমাদের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয় না ওই বিপিএল ছাড়া। সেক্ষেত্রে টি-টোয়েন্টিতে আমরা তো সবসময়ই নতুন দল। তাই টি-টোয়েন্টিতে কিছু আশা করাও ঠিক না। যদিও আমরা এতে ভালোই খেলছি। ওয়ানডে আমাদের নিয়মিত হয় তাই এতে আমরা ভালো করছি। বিশেষ করে ঘরের মাঠে। বাইরেও ভালো করছি খারাপ না। কিন্তু টেস্টে কিন্তু আমাদের ওইভাবে খেলা হয়ই না। একটা খেলোয়াড় যে পাঁচদিন ফিট থাকবে এর পরীক্ষা সে কোথায় দেবে? ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্যই। এই অনুশীলন আমাদের নেই। এটার উন্নতি করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে হবে। এই দেখেন বিসিএলের খেলা হচ্ছে সেখানে আড়াই তিনদিনে খেলা শেষ। গতকালও আড়াই দিনেই খেলা শেষ হয়েছে। সুতরাং চারদিন খেলে পাঁচদিনের জন্য যে ফিটনেসটা দরকার সে ক্ষমতাটা আমরা দেখাতে পারি না। নিউজিল্যান্ডে মুশফিকেরটা আলাদা তবে মুমিনুল কিংবা ইমরুলের টান জনিত যে ইনজুরি এটা এ জন্যই হয়েছে। এবার তাসকিন ইনজুরি থেকে এসেছে, শফিউলও এসেছে তো আমাদের এই একটা দুশ্চিন্তা থেকেই যায়।আর ফিল্ডিংয়ে আমাদের দুর্বলতা অনেক বেশি প্রকট। ভারতের একটা ক্যাচ মিস করা মানেই সেঞ্চুরির সমান হবে। কারও একটা ক্যাচ মিস করলে সেটাকে ওরা শতরানে পরিণত করবে। ওরা এগুলো মাথায় নিয়েই খেলে একটা জীবন মানে এটাকে সেঞ্চুরি করতে হবে। আমাদের ফিল্ডিং কিন্তু ভালো, তবে ওইভাবে পারফরম্যান্স হয় না। আর নিউজিল্যান্ডের পরিবেশ কিন্তু আলাদা ছিল। অনেক বাতাস ছিল উইকেট ভেজা ও সুইং ছিল। বল উপরেও সুইং নিচেও সুইং। ভারতে কিন্তু আমাদের মতোই পরিবেশ সেখানে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তাই সব মিলিয়ে আমি একটা ড্র ম্যাচ আশা করছি। ওদের সঙ্গে ড্রয়ের চিন্তা করে খেলটাই হবে মূল লড়াই। আর এটাই আমাদের জয়।অনেকেই প্রস্তুতি ম্যাচের কথা বলবে। সেখানে বাংলাদেশ পাত্তাই পায়নি। দীর্ঘ জার্নির পর হঠাৎ করে নতুন পরিবেশে গিয়ে এমনটা হতে পারে। আর ওদের ‘এ’ দল কিন্তু জাতীয় দলের মতোই শক্তিশালী। আমাদের ব্যাটিংটা খারাপ ছিল। আর আমাদের বোলিংটা তত কার্যকরী ছিল না। তবে আমার মনে হায়দারাবাদের এ উইকেটটা একটু আলাদা হবে। একটু টার্নিং উইকেট হবে।সবদিক থেকেই ভারত অনেক শক্তিশালী। তবে ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, এখানে শক্তিতে কিছু যায় আসে না। যেমন অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের গিয়ে হেরে আসলো। বাংলাদেশেরও একই অবস্থা ছিল নিউজিল্যান্ডে গিয়ে। শক্তি আসলে ক্রিকেটে তেমন বিবেচ্য বিষয় না। কারণ আমরা একসময় দেখতাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারতো না এখন ব্যপারটা উল্টো হয়ে গেছে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আমাদের তিন ডিপার্টমেন্টে যেমন খেলোয়াড়রা আছে তারা সবাই যদি নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটা দিতে পারে তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবেই। হওয়া উচিৎ আসলে। কমপক্ষে পাঁচদিন টেস্ট গড়ানো উচিৎ।আরটি/বিএ
Advertisement