আগেরদিনই বলেছিলাম, বৃষ্টি ক্ষতির কারণ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য। সেটাই আজ দেখা গেলো। যেটা চিন্তা করেছিলাম সেটাই ঘটেছে। সকাল সকাল তাদেরকে অলআউট করে দিতে পারলে লম্বা সময় ধরে আমারা ব্যাটিং করবো। সেটা আমরা করতে ব্যার্থ হয়েছি। কারণ আমাদের কোনো অ্যাপ্লিকেশনই ছিল না। কিভাবে ব্যাটিং করবো, কিভাবে কী করবো, কোনো কিছুই আমাদের পরিকল্পনায় ছিল না।
Advertisement
ক্রাইস্টচার্চে শুরু হয়েছিল আমাদের নিউজিল্যান্ড সফর। প্রথম ম্যাচে হেরেছিলাম আমরা। শেষে এসেও এই ক্রাইস্টচার্চে হারলাম। মাঝে যে ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে সবগুলোতেই হেরেছি। একটা ম্যাচেও জিততে পারেনি। এর মূল কারণ, আমাদের আসলে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। একটি সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা প্রত্যেকটি ম্যাচ হেরেছি। যে ইনিংসগুলো আমাদের বড় হতে পারতো সেগুলো বড় করতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা। কিংবা ব্যাটসম্যানদের যে রোল ছিল, সে রোলটাই তারা সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি কিংবা প্রয়োগ করতে পারেনি। এখানে দুটো বিষয় হতে পারে। একটা হচ্ছে, হয়তো আমাদের প্ল্যান ছিল, কিন্তু কেউ সেই প্ল্যান অনুযায়ী খেলতেই পারিনি। মাঠে সেই প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আরেকটা হতে পারে, আমাদের কোনো সঠিক প্ল্যানই হয়তো ছিল না। কোনটা সঠিক সেটা বলতে পারছি না। যেটাই হোক, আমরা প্রতিটি ম্যাচে হেরে গিয়েছি।আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই দলটাকে কখনোই একটা দল বলে মনে হয়নি। দলের প্রতিটি সদস্যকে একেকটা দ্বীপের মত মনে হয়েছে। টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার থেকে শুরু করে, ফাস্ট বোলিং, স্পিন বোলিং থেকে শুরু করে দলের পরিকল্পনা দেখে কখনোই মনে হয়নি, এই দলটিই হোমে টানা ৬টি সিরিজ জিতেছিল।এর কারণটা কিন্তু এখনই খুঁজে বের করা উচিত। কারণ, খুঁজতে গেলে প্রথমে যেটা খুঁজতে হবে সেটা হচ্ছে- আমাদের দলের স্কিল লেভেলের কোনো ডেভেলপমেন্ট নেই। আমাদের দলের সিনিয়র ক্রিকেটারের মধ্যে অ্যাপ্লিকেশনের অভাব। ২০১৭ সালটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বছরের শুরুতেই যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি, সেটা খুবই ভয়ঙ্কর একটি ব্যাপার। অথচ এই দলটির সঙ্গে প্রতিটি বিভাগেই কোচ রয়েছেন। ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, স্পিন কোচ- সবাই রয়েছেন। এত বিশেষজ্ঞ থাকার পরও কেন এমন ব্যর্থ হলো দল- এটা খুঁজে বের করা উচিৎ।সামনে সময়গুলোতে ভালো করার জন্য এই দলটি যখন ঢাকা ফিরবে তখন তাদের নিয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। তাদের মানসিক শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার কঠিন কাজটি এখন টিম ম্যানেজমেন্টকে করতে হবে। যদিও হাতে সময় খুব অল্প। কিছুদিন পরই ভারত সিরিজ। তার আগেই যা করার এই দলটিকে নিয়ে বসে করার চেষ্টা করতে হবে।নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দল যে পারফরম্যান্স করেছে এর মধ্যে খুব বেশি ভালো কিছু খুঁজে পাওয়া দায়। তবুও যা কিছু ভালো হয়েছে সেগুলো থেকে অনুপ্রেরণা এবং যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সিরিজ যখন শেষ তখন এ নিয়ে আর বেশি ঘাঁটাঘাটি করে লাভ নেই। সামনে কিভাবে ভালো করা যায়, সে চিন্তাটাই সবার আগে করতে হবে। আমরা এখন সামনের সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছি, যে এই দলটি কেমন করে সেদিকে। আমাদের কোচিং স্টাফদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেলো। তাদের এখন প্রধান কাজই হবে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে, টেকনিক্যালি, ট্যাকটিক্যালি- দলকে নতুন করে তৈরি করা। এখানে আরেকটা ব্যাপার যোগ করতে চাই, নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে আমরা যে ভয়গুলো করেছিলাম; কিন্তু টিভিতে খেলা দেখার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম, সেই ভয়গুলোর সবই অমূলক। উইকেট কখনও থ্রেট ছিল না, কন্ডিশনও কখনও থ্রেট ছিল না। নিউজিল্যান্ড দল হিসেবেও কখনও কঠিন মনে হয়নি। আমরা প্রত্যেকটি ম্যাচেই আমাদের নিজেদের দোষেই তাদেরকে জয় উপহার দিয়ে এসেছি। পরবর্তী সিরিজে খেলতে যাওয়ার আগে আমাদের এই দোষগুলো খুঁটিয়ে দেখে সেগুলো সমধান করা উচিৎ।সিনিয়রদের ব্যর্থতাকে এখানে অনেকেই দায়ী করছেন। আমি বলবো, অফ ফর্মে অনেকেই ছিল। এটা থাকাটাই স্বাভাবিক। একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় পুরো সিরিজেই অফ ফর্মে থাকতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা হলো, আমাদের নির্দিষ্ট কোনো গেম প্ল্যান ছিল কি না। যেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে এসব সিনিয়র বলেন আর জুনিয়র বলেন অফ ফর্মে থাকা ক্রিকেটাররা ফর্মে ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারতো। গেম প্ল্যান থাকলে, সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো চেষ্টা ছিল না।
পুরো সিরিজে দলের ব্যর্থতার যদি পোস্ট মর্টেম করা হয়, তাহলে এখানে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি উঠে আসবে, সেটা হলো আমাদের টিম সিলেকশনে বড় ব্যর্থতা। এখানে আরও একটা বিষয় হলো, সিলেকটরদেরকে স্বাধীনতা না দেয়া, কোচ এবং ম্যানেজারকে নির্বাচকের ক্ষমতা দেয়া। সিরিজের মধ্যখানে দলের মধ্যে কোন্দলের গুঞ্জন ভেসে বেড়ানো- সব মিলিয়ে পুরো সফরে একটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখানে আমি কিন্তু শুধুমাত্র খেলোয়াড়দেরই দায়ী করবো না। কারণ, এসবের দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট যারা আছে সবার। ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগও এ দায়িত্ব কোনোমতে এড়াতে পারে না। দীর্ঘদিন আমাদের এই দলটি বিদেশ সফরে যায়নি। হোমে খেলেছে টানা। এত বড় লম্বা এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সিরিজে কি না দলের সঙ্গে ম্যানেজারই যাননি নিউজিল্যান্ডে। এগুলোও তো খুঁজে দেখার বিষয়।ফিল্ডিংটা ছিল খুবই বাজে। এর পেছনে আমি মনে করি দুটো কারণ। একটা হলো, হয়তো মনোযোগের অভাব কিংবা আমাদের ক্রিকেটারদের ফিটনেস নাই। এগুলোই মূল কারণ। আইএইচএস/
Advertisement