বিশেষ প্রতিবেদন

১৫ মিনিটেই গুলশান থেকে কারওয়ানবাজার

যান্ত্রিক নগরীতে পরিবহন সমস্যা ক্রমেই প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। জীবন জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষকে কর্মস্থলে ছুটে বেড়াতে হয়। তীব্র যানজটের কারণে নির্ধারিত গন্তব্যে যথাসময়ে পৌঁছাতে না পাড়ার বেদনা নিত্যদিন নগরবাসীকে পীড়া দেয়। ২০১২ সালের কথা। ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় রাজধানী ঘিরে থাকা নদীগুলোতে ওয়াটার বাস। লক্ষ্য ছিল রাজধানীবাসীর যাতায়াতে দুঃখ লাঘব করা। গাবতলী থেকে বাবুবাজার, বাদামতলী ও সদরঘাট পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার পথ যানজটমুক্ত, আরামদায়ক ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। বিআইডব্লিউটিসির এ উদ্যোগে এক বুক স্বপ্নও বেঁধেছিল রাজধানীবাসী। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আশা যেন দুরাশায় রূপ নেয়। বর্তমানে প্রায় ব্যর্থ এই প্রকল্প। অপরদিকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হাতিরঝিলে এফডিসি থেকে মেরুল বাড্ডা ও গুলশান গুদারাঘাটে সম্প্রতি চালু হওয়া ওয়াটার বাস সার্ভিস স্বল্প সময়ের মধ্যে জনগণের মাঝে আশা জাগিয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিকতা থাকলে যে একটি প্রকল্প সফল হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হাতিরঝিলের ওয়াটার সার্ভিস। জাগো নিউজের একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী সরেজমিন দুটি প্রকল্প ঘুরে এসে একাধিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।ওয়াটার ট্যাক্সিতে প্রাণ ফিরেছে হাতিরঝিলে। রাজধানীর বুক চিরে ভেদ করে চলা এ ঝিলের মধ্য দিয়েই এখন নৌকায় যাত্রী পারাপার হয়। শুধু বিনোদনপ্রেমীদের জন্য নয়, যাত্রী সাধারণও ভিড়ছে হাতিরঝিলে ট্যাক্সি ঘাটে। বিরক্তিকর যানজটের সড়ক থেকে মুখ ফিরিয়ে অনেকেই হাতিরঝিলে চলা ট্যাক্সিতে ভরসা পাচ্ছেন।মাসের ব্যবধানেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে হাতিরঝিলের পানিপথ। যানজটের জালে বন্দি রাজধানীবাসীর জন্য পরিবহন ব্যবস্থায় হাতিরঝিলে যুক্ত হওয়া নতুন বাহন ওয়াটার ট্যাক্সি নগরবাসীর মনে আশার আলো জাগিয়েছে। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন এ ট্যাক্সিগুলো এফডিসি মোড় থেকে বাড্ডা সংযোগ সড়ক ও রামপুরা সেতু বা মেরুল বাড্ডার মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু হওয়ায় গুলশান বা বাড্ডা থেকে কারওয়ানবাজার যেতে সময় লাগছে মাত্র ১৫ মিনিট।মেরুল বাড্ডায় ওয়াটার ট্যাক্সি ঘাটে টিকিট কেটে কারওয়ানবাজার যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন অ্যাড. মুরাদ আহমেদ। তিনি বলেন, ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিসে মাত্র ১৫ মিনিটেই পৌঁছানো  যাচ্ছে কারওয়ানবাজারে। যেখানে বাসে যেতে সময় লাগতো দেড় ঘণ্টা। যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীর কাছে এটা একটা  বড় উপহার।তিনি বলেন, বিকেলের দিকে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও সকালের দিকে অনেকটাই ফাঁকা থাকে আর তাতে দুপুর পর্যন্ত চলাচলকারী যাত্রীদের অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে মোট চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি তিনটি ঘাটে চলাচল করছে। যেমন আমি এখানে ২০ মিনিটের বেশি সময় নিয়ে অপেক্ষা করছি। ওপাশ থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিটি যাত্রীভর্তি করে ফিরে আসবে। তারপর যখন ট্যাক্সিটায় উঠবো তখন আরেক অপেক্ষা শুরু হবে। যাত্রী কমপক্ষে ২০/২৫ জন হলে তবেই ওয়াটার ট্যাক্সি ছাড়ে।একই সময় ওয়াটার ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছিলেন অভিনেতা দেবাশীষ বিশ্বাস। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস খুবই ভালো উদ্যোগ। ওয়াটার ট্যাক্সিতে খুব অল্প সময়ই এফডিসির সামনে পৌঁছানো যায় মেরুল বাড্ডা থেকে, তাই নিজের গাড়ি না নিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, অপেক্ষমাণ যাত্রীদের জন্য এখানে কোনো বসার ব্যবস্থা নেই। ওয়াটার ট্যাক্সির জন্য যাত্রীদের যেহেতু এখানে অপেক্ষা করতে হয়, সেহেতু যাত্রীদের বসার ব্যবস্থার  পাশাপাশি আরো ওয়াটার ট্যাক্সি বাড়ানো দরকার। হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সির প্রজেক্ট ইনচার্জ সোহেল আহমেদ বাবু জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিনই ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়তে যাত্রী-দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। সকালে যাত্রী কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে।এদিকে গুলশান-বাড্ডা সংলগ্ন গুদারাঘাটের ওয়াটার ট্যাক্সির চেকার তুষার আহমেদ জানান, প্রতি ১৫ মিনিট পর পর এখান থেকে ওয়াটার ট্যাক্সি ছেড়ে যায়। সারা দিনে আনুমানিক ১৭/১৮টা ট্রিপ হয়।২০০৭ সালে ৩০২ একর জমির ওপর হাতিরঝিল প্রকল্পের সংস্কারকাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। এরপর প্রায় তিন বছর হাতিরঝিলে কোনো গণপরিবহন ছিল না। আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর হাতিরঝিলে চালু হয় চক্রাকার বাস সার্ভিস। এরপরই বিজয় দিবসে রাজধানীরবাসীর জন্য পরিবহন ব্যবস্থায় যুক্ত হয় আরেকটি নতুন বাহন ওয়াটার ট্যাক্সি।ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হওয়ায় এ রুট ব্যবহারকারী লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি যানজটে নাকাল নগরবাসীর মধ্য স্বস্তি ফিরেছে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বিনোদনের নতুন মাত্রাও যোগ হয়েছে হাতিরঝিলে।ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হওয়ায় বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কারওয়ানবাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর, তেজগাঁও এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারছেন। ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা থেকে যাতায়াতের পাশাপাশি নগরবাসী নৌভ্রমণের আনন্দও নিতে পারছেন।ট্যাক্সির প্রতিটিতে ৪৫ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা। চালু হওয়া এই চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর গন্তব্য ছেড়ে যাচ্ছে তিনটি টার্মিনাল থেকে। এফডিসি বা কারওয়ানবাজার মোড় থেকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড হয়ে গুদারাঘাট যেতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। এফডিসি বা কারওয়ানবাজার মোড় থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত  ভাড়া ২৫ টাকা। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিফটে ভাগ করে বিরতিহীনভাবে সেবা দিচ্ছেন ওয়াটার ট্যাক্সির কর্মচারীরা। পরবর্তীতে ওয়াটার ট্যাক্সির এ সুবিধা গুলশান ও বারিধারায়ও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।এএস/এসএইচএস/এমএস

Advertisement