ধর্ম

দুনিয়া ও পরকালে কল্যাণ কামনার সর্বোত্তম দোয়া

জাহেলিয়াতের যুগের লোকেরা হজ সম্পাদনের পর একত্রিত হতো এবং নিজেদের পূর্ব পুরুষদের গৌরবের কথাবার্তা এবং বংশীয় মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনায় মেতে ওঠতো। অতপর আল্লাহ তাআলা মানুষদেরকে হজ পরবর্তী সময়ে তাঁকে স্মরণ করার নির্দেশ প্রদান করেন।তাদের মধ্যে অনেকে দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করতো আর পরকাল সম্পর্কে বেখবর থাকতো। যেহেতু তারা পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতো না। আর এ কারণেই তাদের জন্য পরকালে কল্যাণের কোনো অংশ নেই।পক্ষান্তরে যারা পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতো অর্থাৎ যারা ইসলামের অনুসারী তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করেন। একজন মুসলমান কিভাবে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনা করবে তা শিক্ষা দানের জন্য এ আয়াতে নাজিল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-আয়াতের অনুবাদআয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণসুরা বাকারার ২০১-২০২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের কল্যাণ কামনা সর্বোত্তম দোয়া শিক্ষা দান করেছেন। এ আয়াতটি হলো দুনিয়াতে মুসলমানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া।যারা পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে তথা মুসলমানগণ আল্লাহ তাআলার কাছে এভাবে প্রার্থনা করে যে, হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দান কর অর্থাৎ তোমার ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান কর; তোমার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করার সুযোগ দান কর।এবং পরকালের কল্যাণ দান কর অর্থাৎ নেক আমলের মাধ্যমে সাওয়াব লাভ; আল্লাহ তাআলার অনন্ত অসীম রহমত এবং চিরস্থায়ী শান্তির প্রাণকেন্দ্র জান্নাত দান কর; দোজখের কঠোর শাস্তি থেকে হিফাজত কর।যারা এ আয়াতের মাধ্যমে এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করে নিঃসন্দেহে তারা পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে সব ধরনের কল্যাণ লাভে ধন্য হবে।তাফসিরে ইবনে কাসিরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে, ‘দুনিয়ার জীবনের কল্যাণ হলো- সুস্বাস্থ্য, আরাম, বাড়ি-ঘর, স্ত্রী-পুত্র-পরিবার, ইলম ও আমল, উত্তম যানবাহন, চাকর-চাকরানি এবং মান-সম্মান ইত্যাদি।আর পরকালীন জীবনে কল্যাণ হলো- কিয়ামত দিবসের হিসাব সহজ হওয়া, কিয়ামতের কঠিন দিনের ভয়-ভীতি থেকে নাজাত পাওয়া, ডান হাতে আমলনামা পাওয়া, আল্লাহর নিয়ামত লাভে আনন্দিত হওয়া এবং জান্নাতে প্রবেশ করা।আর দোজখ থেকে পানাহ চাওয়ার অর্থ হলো- আল্লাহ তাআলা এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেবেন যা দ্বারা যাবতীয় অন্যায় ও অবৈধ কাজ থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হয়।আর আল্লাহ তাআলা ২০২ নং আয়াতে দুনিয়ার কার্যক্রম অনুযায়ী প্রতিদান প্রদানের ওয়াদা করেছেন। দুনিয়াতে যে যেমন কল্যাণ কামনা করবে; আল্লাহ তাআলা মানুষকে সে অনুযায়ী প্রতিদান প্রদান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হজের সময় দোয়ার মাধ্যমে যে আমল) তারা যা অর্জন করেছে (তা দ্বারা) তার প্রাপ্য অংশ অর্থাৎ (প্রতিদান) তাদেরই। বস্তুত আল্লাহ তাআলা হিসাব গ্রহণে অতি দ্রুত।পড়ুন- সুরা বাকারার ২০০ নং আয়াতপরিষেশে...পরকালের সফলতার লাভের কর্মস্থল হলো এ দুনিয়া। তাই দুনিয়ার এ জীবনেই অর্জন করতে হবে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সম্বল। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াতের মাধ্যমে দুনিয়া উত্তম কর্মের মাধ্যমে পরকালের শান্তিময় ফলাফল লাভের জন্য সর্বোত্তম দোয়া ও কর্মপন্থা ঘোষণা করেছেন।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের সুনিশ্চিত, অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সর্বোত্তম দোয়ার মাধ্যমে তাঁকে বেশি বেশি স্মরণ করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনায় নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধান যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এমএস

Advertisement