মতামত

‘তোমার জন্য সব করতে পারি’

আমাদের শিল্পীদের সমস্যা টা কি? আমরা যখন লাইম লাইটে আসি, তখন আমরা আসলেই লাইম লাইটে থাকাটা ভালোবাসি অথবা পছন্দ করি। কিন্তু এটা কি দোষের কিছু? কে না পছন্দ করে মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে, দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যদি সেটা পজিটিভ হয়? সবারই মনের ভেতরে এই গুপ্তবাসনা কাজ করে। হয়তো ক্ষেত্র টা আলাদা হতে পারে। শিল্পীরাও মানুষ।তাদেরও মন আছে। আমরা ৮/১০ জন সাধারণ মানুষের মতো প্রেমে পড়ি, কাউকে ভালোবাসি, কাউকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়ার স্বপ্নও বুনি। প্রেম যখন অন্ধ, ভালোবাসা যখন গভীর তখন আর সবার মতো আমাদের শিল্পীদেরও মনে হয় এই ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়া আমরা বাঁচবো না। ভালোবাসার সামনে সবকিছু তুচ্ছ মনে হয়, তাই না? হয়তো সেই ভালোবাসার গভীরতা থেকে বলেই ফেলি বা কথা দিয়ে দেই, ‘তোমার জন্য সব কাজ আমি ছেড়ে দেব, যেকোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি আমি।’ তারপর খুশি মনে ভালোবাসার মিলন হলো । রূঢ় বাস্তবতার কারণে কেউ কেউ হয়তো নিজের ইচ্ছা বা স্বপ্ন বা ভালোলাগার কাজ মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিসর্জন  দেয় ভালোবাসার মানুষটির জন্য। যারা উঁচু সারিতে ছিলেন, যারা সব সময় মানুষের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, তাদের জন্য হঠাৎ করে সবার মাঝখান থেকে নিজেকে নিজের ভুবনে গুটিয়ে ফেলা, সরিয়ে নিয়ে কিছুটা নিঃস্ব হয়ে যাওয়া জীবনের এক বড় ছন্দপতন।  এ অবস্থায় নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার অনুভূতি নিয়েই বাঁচতে হয়। প্রথম প্রথম ভালোই লাগে কিন্তু আস্তে আস্তে শুরু হয় ঐ একাকিত্ব। এক ঘেঁয়েমি জীবন। আর এই অনুভূতিটা কিন্তু সাথে সাথে হয় না, হয় কিছু দিন পর। কিভাবে শুরু হয় সেই অনুভূতি? একেক জনের জীবন একেক রকম, সুতরাং শুরুটাও ভিন্ন। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুরু হয় পাশের সাবেক সহকর্মীকে দেখে। যখন পাশের সহকর্মীকে দেখছে তার দিকে সবার নজর, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তার সাফল্য। অথচ নিজেকে ভালোবাসার মানুষের জন্য গুটিয়ে নেয়ার পর তার কেউ খোঁজ নিচ্ছে না, যেখানে সেও ছিল আলোচনার শীর্ষে এক সময়। কিন্তু আসলে, এই মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে কতো মানুষ আসছে যাচ্ছে, কেউ যখন হঠাৎ করে চলেও যায় মানুষ তা খেয়ালও করে না, মনেও রাখে না। খেয়াল বা মনে হয়তো করিয়ে দেন মাঝে মাঝে গণমাধ্যমকর্মীরা। আচ্ছা, ভালোবাসার প্রধান উপাদান গুলো আর ধাপ গুলো কি? ১- ভালোলাগা২-মোহ+ ভালোলাগা৩-মোহ + ভালোলাগা + নিজেদের মধ্যে জানাশোনা/ বোঝাপড়া ৪- মোহ + ভালোলাগা + নিজেদের মধ্যে জানাশোনা/ বোঝাপড়া বিশ্বাস+ শ্রদ্ধা । বিয়ের পর মোহটা কেটে যায়, অন্য গুলো উপাদান উপরনিচ করে, যা নির্ভর করে যার যার ভালোবাসার গভীরতার ওপর, ভালোবাসার ভিত্তির ওপর। যদি ঐ উপাদানগুলোর কোনো না কোনো উপাদান ভারসাম্যহীন হয় তখনই সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে। এখন যখন জীবন যুদ্ধে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি, হয়তো কোনো না কোনোভাবে অবহেলিত তখন আমরা অভাব অনুভব করতে থাকি সেই অপরিচিত মানুষগুলোর যাদের চোখের মধ্যমণি ছিলাম, সেই মানুষ গুলোর যাদের সাথে দিনের পর দিন কাজ করা হয়েছে, হাসি- মজা আরও কতো কিছু। জীবনের অনিবার্য প্রয়োজনে আমাদের কি কোনো অধিকার নেই যে সেই কথা দেয়া বা শর্তের পরিবর্তন আনতে পারবো না? নিজের জীবনের সুখের থেকে, চাওয়া-পাওয়ার থেকে কোনো অগ্রিম শর্ত, সিদ্ধান্ত কি বড়? আমরা কি জানি এক বছর পর আমরা কি পাবো, কি হারাবো? হ্যাঁ, এখন অনেকেই বলবেন, ‘‘তাহলে কথা দেয়ার দরকার কি?’’ ঐ যে, কথা দেই যখন ভালোবাসার উপাদান গুলোর ভারসাম্য থাকে আর পরিবর্তন করতে চাই যখন ভারসাম্যহীন হয়ে যায় নতুবা কোনো উপাদান নাই হয়ে যায়। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সব সময় নতুন নতুন উপাদান সংযোজন করা উচিত। আর এর অন্যতম হচ্ছে পরিবর্তনকে গ্রহণ করা। একটা মানুষের মনে তার ইচ্ছা– আকাঙ্খার পরিবর্তন আসতেই পারে। পুরনো কথার ওপর জেদ না করে ভালোবাসার মানুষটির খুশিকে সম্মান করা, মেনে নেয়া উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্যায় কিছু না হয়। অহঙ্কারটুকু ঝেড়ে ফেলে, উৎসাহ দিন আপনার জীবনসঙ্গীকে দেখবেন সেই আপনাকে নিয়ে সবার সামনে সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করছে।লেখক : বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত  মিজ আর্থ (২০১৬), মিজ আয়ারল্যান্ড  (২০১৪), মডেল ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। পেশাগত জীবনে বৈমানিক।এইচআর/এমএস

Advertisement