দেশীয় চ্যানেল বাংলায় ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল প্রচার ও দেশীয় ফিডে দেশের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচার বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে দেশের নির্মাতা-শিল্পীরা। গেল কয়েক সপ্তাহে এ নিয়ে মিডিয়া বেশ সরগরম। চলছে অনেক মিটিং-প্রস্তুতি। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও একত্রে বসছেন শিল্পী-নির্মাতারা। সেই দাবির প্রেক্ষিতে এরইমধ্যে এটিএন বাংলা ঘোষণা দিয়েছে তারা কোনো বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করবে না বলে।তবে বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের এই আন্দোলনটি সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ নিয়ে ঘোলা হচ্ছে অনেক জল। এর মূলে রয়েছে সম্প্রতি ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত চ্যানেল মালিকদের উদ্যোগে গঠিত ‘মিডিয়া ইউনিটি’ নামের একটি সংগঠনের ডাকে শিল্পী ও নির্মাতাদের সংহতি প্রকাশ করায়। এই সংগঠনটি অবৈধ পথে বিজ্ঞাপন-অনুষ্ঠান আমদানিসহ নানা অনৈতিক কার্যক্রমে দেশীয় চ্যানেল ব্যবসার যে ক্ষতি করছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এখানে ডিরেক্টরস গিল্ড, অভিনয় শিল্পী সংঘসহ সবমিলিয়ে ১৬টি সংগঠন যোগ দিয়েছে। কিন্তু মিডিয়া ইউনিটির নেতৃত্বে থাকা বেশ কিছু চ্যানেল নিজেরাই বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের দোষে দুষ্ট। তারমধ্যে অন্যতম ইটিভি ও জিটিভি। চ্যানেল দুটিতে হাতিম, সীমান্তের সুলতান এবং আলিফ লায়লাসহ বেশ কিছু বিদেশি সিরিয়াল প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ইটিভিতে ‘হাতিম’র প্রচারও শুরু হয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, বিদেশি সিরিয়াল প্রচারে অভিযুক্ত চ্যানেল ও তার কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছে ডিরেক্টরস গিল্ডসহ নির্মাতা-শিল্পীদের সংগঠনগুলো? ভেতরে ভেতরে কী কোনো আঁতাত চলছে চ্যানেল মালিকদের সঙ্গে? তাই শোবিজের নির্মাতা ও শিল্পীদের মধ্যেও আন্দোলন নিয়ে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তারা কাঠগড়ায় তুলেছেন নির্মাতা-শিল্পীদের সংগঠনের নেতৃত্বকেও।তবে এইসব সন্দেহ-সমালোচনাকে বিভ্রান্তি দাবি করলেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নাসিম। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে আন্দোলন নিয়ে। অনেকেই ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন। নির্মাতা-শিল্পীদের আন্দোলনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। তাদের জন্য স্পষ্ট করে বলছি, দুটি আন্দোলন সম্পূর্ণ দুটি আলাদা বিষয়ের। আমাদের দাবি বিদেশি সিরিয়ালি বন্ধ করে দেশীয় শিল্পীদের রক্ষা, দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা। বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন চড়া দামে দেয়া বন্ধ করে দেশীয় চ্যানেল ব্যবসাকে গতিশীল রাখা। সেখানে নির্মাতা-শিল্পীদের সংহতি যেমন প্রয়োজন তেমনি চ্যানেল মালিক ও চ্যানেল সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সংহতিও প্রয়োজন। এরইমধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে এসেওছেন। আর মিডিয়া ইউনিটির দাবি হলো চ্যানেল ব্যবসাকে সুন্দর, শৃঙ্খল, বৈধ উপার্জনে মুনাফার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। সেখানে আর সবার মতো আমরাও সংহতি জানিয়েছি। কেননা, চ্যানেলগুলো যদি নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে বন্ধ হয়ে যায় তবে আমাদের কোনো দাবি বা আন্দোলনেরই ভিত্তি থাকবে না। তাই আগে প্রয়োজন তাদের টিকিয়ে রাখা। তাই আমাদের দাবি এবং আন্দোলন কোনোটাই ভুল পথে নয়। আমরা সঠিক দাবি নিয়েই এগিয়ে চলেছি। ’তিনি আরো বলেন, ‘আর বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করাই আমাদের মূল দাবি। সেই দাবি আদায় করতে আমরা সব কিছুই করতে রাজি আছি। কেননা, দিন দিন বিদেশি সিরিয়ালের আধিক্যে বেকার হয়ে পড়ছে আমাদের দেশীয় নির্মাতা ও শিল্পীরা। মূল্যায়ণ কমছে। সেই দাবি নিয়েই আগামী ৩০ নভেম্বর আমরা একত্র হবো। সেখানে সবাই আসুন। যার মনের যা প্রশ্ন-সন্দেহ সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু ভুল বোঝে দূরে থাকলে ফায়দা লুটবে সংস্কৃতি ধ্বংসকারীরা।’নাসিম আরো জানান, সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ করে দেশীয় নির্মাতা ও শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে একটি শিল্পী সমাবেশর আয়োজন করা হয়েছে। আসছে ৩০ নভেম্বর রাজধানীতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হবে ‘টেলিভিশন শিল্পী কলাকুশলী সমাবেশ’। এর আয়োজন করছে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)। সমাবেশের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বরেণ নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত। নাসিম বলেন, ‘এই সমাবেশ সবরকম আইনানুগ প্রক্রিয়া মেনেই হবে। এখানে কোনো উগ্রতা থাকবে না। আমরা শিল্পী মানুষ, শৈল্পিকভাবেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। রাস্তা অবরোধ কিংবা কোনো রকম ভাংচুর করার সমাবেশ নয়। আমাদের উদ্দেশ্য মামুনুর রশীদ ভাই, গাজী রাকায়েত ভাইদের নেতৃত্বে সবাই এক হবো, দাবি আদায়ের আলোচনা করবো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করবো। এখানে টেলিভিশন পেশার সঙ্গে যুক্ত যে কেউ বা যে কোনো সংগঠনই যোগ দিতে পারে। যে চ্যানেল সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে তারা বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করবে না তারা আমাদের সমাবেশে এসে সংহতি প্রকাশ করতে পারে। তাদের আমরা সম্মানের সঙ্গে স্বাগত জানাবো।’আন্দোলন নিয়ে কোনো রকম বিভ্রান্তিতে কান না দিতে নির্মাতা, শিল্পী ও টেলিভিশনের কলাকুশলীদের অনুরোধ জানিয়েছে নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড। জানানো হয়েছে, ৩০ নভেম্বরের সমাবেশের আগে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সেখানে আন্দোলনের কর্মসূচিসহ অন্যান্য বিষয়াদি বিস্তারিত জানানো হবে।এলএ/পিআর
Advertisement