সাদা-মাটা একটি দল। বিপিএলের তৃতীয় আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে কেউ গোনায়ও ধরার সাহস পায়নি। তবুও সবাই আলাদা একটা চোখ রেখেছিল কুমিল্লার ওপর। কারণটা আর কিছুই নয়, মাশরাফি। বিপিএলের আগের দুই আসরে ঢাকাকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। তার জাদুকরী নেতৃত্বে সাধারণ মানের একটি দলও হয়ে উঠতে পারে দুর্দান্ত। পরের ইতিহাস সবারই জানা। মাশরাফি সত্যি পেরেছিলেন। কুমিল্লাকে শিরোপা উপহার দিয়েই ছাড়েন তিনি।গত আসরের প্রায় অনেকেই এবারের দলটিতে রয়েছে। মাশরাফি নিজে। ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, আসহার জাইদি, মারলন স্যামুয়েলস- অনেকেই। কুমিল্লার ফ্রাঞ্চাইজি ভেবেছিল মাশরাফির হাত ধরে এবারও বুঝি চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরবেন তারা।কিন্তু সবার আশার গুড়ে বালি। সাত ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকায় তলানিতে আছে দলটি। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে খুব বড় কিছুর স্বপ্ন দেখাও সম্ভব নয়। দলের কর্ণধার নাফিসা কামালও এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি লিখেছেন, ‘যখন আপনি সবার উপরে থাকবেন ভক্ত, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের তখন চারপাশে পাবেন। কিন্তু যখন হারতে শুরু করবেন, তখনই বুঝতে পারবেন, বাস্তবতা কাকে বলে। তবে আমি অন্তত এটা বলতে পারি, এই একটানা পরাজয়ের পরও যে কোনো সময়ের চেয়ে আমার এখন বন্ধু, সমর্থক এবং শুভাকাঙ্ক্ষী বেশি। এতো ভালোবাসা আর সম্মান আমাকে মুগ্ধ করে এবং বিস্মিত করে, আলহামদুলিল্লাহ।’ জয়ের অনুভূতি নিয়ে জানান, ‘অবশেষে শনিবার আমরা একটা জয় পেয়েছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, আমরা বুঝি বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছি। গত দু’দিন আমি প্রতিটা মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শুভেচ্ছা পেয়েছি। টং দোকানের চা-ওয়ালা থেকে শুরু করে মন্ত্রী মহোদয়; আমাকে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে এই ভালোবাসা দেখানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’ ফ্র্যাঞ্চাইজি ও অধিনায়কের দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি লেখেন, ‘এই সুযোগে আরও একটু বলি, কিছু লোক আমার এবং আমাদের অধিনায়ককে নিয়ে কিছু নেতিবাচক খবর প্রচার করেছেন। আমি জানি আপনারা কারা। তবে আমি আপনাদের এই কাজ মনেও রাখবো না, আর আমি বিশ্বাস করি, নিতান্ত হতাশা থেকে আপনারা এই কাজ করেছেন। দেখুন, একটা দল যখনই খারাপ করে, আপনারা ম্যানেজমেন্ট অথবা খেলোয়াড়দের দোষ দেন। কিন্তু একবার কেউ অনুভব করেন না, দলের মালিক বা অধিনায়ক যে কারো চেয়ে এই খারাপ ফলে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন! যাই হোক, আপনাদের এই নেতিবাচক প্রচারণা আমাদের দলের সবাইকে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে, আমরা আরও শক্ত হয়ে উঠেছি। ফলে সমালোচকদেরও ধন্যবাদ।’ খেলোয়াড়দের দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিদেশি খেলোয়াড় রিক্রুটের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এরপর আমি অধিনায়ক, কোচ ও ম্যানেজার নির্বাচন করেছি। আমার কাজ এইটুকুতেই শেষ হয়ে গেছে। এরপর থেকে ড্রাফটে (খেলোয়াড় নিলাম) সব স্থানীয় খেলোয়াড়রা নির্বাচন থেকে শুরু করে দলের সব নীতিগত সিদ্ধান্ত এই তিনজনই (অধিনায়ক, কোচ ও ম্যানেজার) নিয়েছেন। আমি কোনো একটা ন্যূনতম সিদ্ধান্তও দেইনি। শুরু থেকে আমার ওনাদের প্রতিটা সিদ্ধান্তে পূর্ণ আস্থা ছিল, এখনও পূর্ণ আস্থা আছে। তারা সেরা দল করেছেন। গতবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দল নিয়ে আমি যেমন গর্বিত ছিলাম, এবারের দল নিয়েও আমি একইরকম গর্বিত। আমরা যে নিয়মিত জিততে পারছি না, সেটা স্রেফ একটা দুর্ভাগ্য। আমরা গতবার ভাগ্যবান ছিলাম, তাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এবার ভাগ্য পক্ষে নেই বলে কিছু ম্যাচ হারছি। তবে সবকিছুরই ‘নেক্সট টাইম’ আছে। আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা অবশ্যই আরও শক্তিশালী হয়ে, আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবো, ইনশাল্লাহ।’এমআর/এনএইচ/পিআর
Advertisement