সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিষয় ভাবিয়ে তুলেছে টেলিভিশন মিডিয়াকে। বিদেশি সিরিয়াল ডাবিং করে দেশীয় চ্যানেলে চালানো, দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন দেশীয় ফিডের জন্য বিদেশি চ্যানেল প্রচার, অবৈধ ডাউনলোড লিংক ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে যাচ্ছে বিপথে।প্রতিকারের লক্ষে অনেক কথা ও গোলটেবিল বৈঠক হচ্ছে, আন্দোলন হচ্ছে। এসব কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন দেশের নির্মাতা-কলাকুশলীরা। সর্বশেষ দেশের চ্যানেল মালিকরা এক হয়ে গড়ে তুলেছেন ‘মিডিয়া ইউনিটি’ নামের একটি সংগঠন। এখানে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৭১ টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাটকো), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ইলেকট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইমা), ডিরেক্টরস গিল্ড অব বাংলাদেশ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ, ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, শুটিং হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সহকারী পরিচালক সমিতি, ব্রডকাস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ মোট ১৬টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিডিয়া ইউনিটি আজ রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে দেশীয় চ্যানেল বাঁচিয়ে দেশীয় নির্মাণকে বাঁচানোর আলোচনা হয়। ৭১ টিভির সিইও এবং মিডিয়া ইউনিটির আহ্বায়ক মোজাম্মেল বাবুর নেতৃত্বে আজকের সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনডিপেনডেট টিভির প্রধান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, আরটিভির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য মোরশেদুল ইসলাম, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ, গাজী টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ আমান ফায়েজ, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও একুশে টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত, অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নাসিমসহ আরো অনেকে। উপস্থিত ছিলেন এক ঝাঁক তারকা। তারাও এসেছিলেন এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে। তাদের মধ্যে অন্যতম সৈয়দ হাসান ইমাম, শহীদুজ্জামান সেলিম, জাহিদ হাসান, শহীদুল আলম সাচ্চু, মীর সাব্বির, মাজনুন মিজান, ইত্যাদির পরিকল্পক ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত, জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নির্মাতা-উপস্থাপক আনজাম মাসুদ, শামস সুমন, আজিজুল হাকিম, শাহরিয়ার নাজিম জয়, চঞ্চল চৌধুরী, প্রাণ রায়, বন্যা মির্জা, তারিন, সুইটি, শাহেদ শরীফ খান, লাক্স তারকা বাঁধন, সাজু মুনতাসীর, আরশাদ আদনান, হিল্লোল, এস এ হক অলিক, চয়নিকা চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচী, শামীমা তুষ্টি, কৌশিক হোসেন তাপস প্রমুখ। সম্মেলনে বক্তারা বেশ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন। তারকারাও জানালেন নিজেদের অভিমত। প্রবীণ অভিনেতা হাসান ইমাম জাগো নিউজকে বললেন, ‘এই আন্দোলনের প্রয়োজন আছে। সবাইকে এক হয়ে এর গুরুত্ব অনুধাবন করে একে স্বার্থক করতে হবে।’ শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ করছি ধীরে ধীরে দেশের সংস্কৃতিকে একটা মন্দ বলয় গ্রাস করে চলেছে। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এমন একটা আন্দোলন সময়ের দাবি।’অভিনয় শিল্পী সংঘ নামে সংগঠনটির সদস্য সচিব আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘আমরা চাই আগে দেশের শিল্পীরা তাদের প্রাপ্য সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকবে। সেই লক্ষে এই আন্দোলনের সঙ্গে আমার এবং আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে একাত্মতা রয়েছে।’ অভিনেতা শামস সুমন বলেন, ‘এটি চ্যানেল মালিকদের আন্দোলন হলেও এর সঙ্গে পুরো ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থ জড়িত। তবে কাউকে কোণঠাসা করে নয়, আন্দোলন হতে হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। আমরা কোনো বিভেদে বিশ্বাসী নই।’জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, ‘আন্দোলনের সঙ্গে আমি সংহতি প্রকাশ করছি। শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্বার্থে যে কোনো কর্মসূচি সমর্থন করি আমি। তবে সেটি যেন গুড়ের লাভ পিঁপড়ায় খাওয়ার মতো কিছু না হয়।’ অভিনেত্রী তারিন বলেন, ‘নানা অনিয়মের মুখে দেশের অনেক শিল্পী বেকার হয়ে পড়ছেন। ক্যামেরাম্যানরা বেকার হয়ে যাচ্ছেন। বাড়ছে অস্থিরতা। এসবের বিরুদ্ধে এমন একটা ইউনিটি প্রয়োজন ছিলো। আশা করছি সঠিক পথেই এগিয়ে যাবে আন্দোলন’। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আন্দোলনটি আগে ছিলো নির্মাতা-শিল্পীদের। এবার মিডিয়া ইউনিটির কল্যাণে এটি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। সুনিপুণভাবে আমাদের একতা ও সততা নিয়ে এর ফলের জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে।’তবে তারকাদের অনেকেই চ্যানেল আই ও চ্যানেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের নোংরা সমালোচনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, এভাবে একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে হেয় করা যায় না। চ্যানেল আইয়ের কিছু ভুল থাকতেই পারে। এমন ভুল আন্দোলনে নামা চ্যানেলগুলোরও আছে। তাই ব্যক্তিগত আক্রোশকে পাশ কাটিয়ে মিডিয়াতে একতা বাড়াতে হবে। নষ্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে একতা রাখতেই হবে। নিজেদের মধ্যে বিভেদ বাড়লে তৃতীয় পক্ষ শক্তিশালী হবে। এদিকে আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করবে মিডিয়া ইউনিটি। সেখানে উপস্থিত থাকবেন দেশের চ্যানেল মালিক, নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী ও মিডিয়া ইউনিটির নেতাকর্মীরা। এলএ/এবিএস
Advertisement