বিনোদন

লোকসংগীতের টানে আর্মি স্টেডিয়ামে জনসমুদ্র

বিষয়টা আঁচ করা গিয়েছিল বিকেলেই। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলেই আজ (শুক্রবার) মানুষের ঢল নামবে ঢাকা ফোক ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে। বিকেল থেকেই দেখা যাচ্ছিলো দর্শকদের ভিড়। ঢাকা আর্মি স্টেডিয়াম থেকে মানুষের লাইন ঠেকে গিয়েছিল বনানীর নৌ বাহিনীর সদর দফতর অবধি। সেই লাইন লক্ষ করা যাচ্ছে এখনো (রাত ৯.৩০ মিনিট)। তবে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে উৎসবে।শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বিকেল ৫টা থেকেই আসতে শুরু করেন উৎসবের দ্বিতীয় দিনের দর্শক। অনেকেই এসেছেন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে দল বেঁধে ছুটির দিনকে মাতিয়ে তুলতে লোক গানের সুর, তাল আর লয়-ছন্দে। পরিবার-পরিজন নিয়েও এসেছেন সপ্তাহব্যাপী কাজের ব্যস্ততায় নিমগ্ন থাকা মানুষগুলো।সংগীত পাগল স্রোতাদের জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে আর্মি স্টেডিয়ামের প্রাঙ্গণ। মূল মঞ্চের সামনে প্রায় হাজার খানেক আসন ভরে গেছে সন্ধ্যা নামার আগেই। খোলা অংশেও দর্শকরা বসে আছেন সবুজ ঘাসের উপর। নতুন করে প্রবেশ করা দর্শকরা এখন আসন নিচ্ছেন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। নানা রকম বাদ্য আর শিল্পীদের কণ্ঠে লোক গানের সুর-তালের সঙ্গে হাজারো দর্শকদের উল্লাসধ্বনিতে আনন্দের এক মহামঞ্চে রূপ নিয়ে আর্মি স্টেডিয়াম।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আশফাকুর রহমান এসেছেন স্ত্রী, শালা, শালার বউ ও নিজের দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে। ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর সুরের তালে শরীর দুলাচ্ছেন। জানালেন, ‘গতকালই আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু অফিসে সপ্তাহের শেষ দিনে অনেক চাপ থাকে। তাই সময় করতে পারিনি। আজ দল বেঁধে সবাই মিলে চলে এসেছি। আমি মূলত শফি মন্ডলের গান শুনতেই এসেছি। আর আমার মেয়ে শুনবে কৈলাশ খেরের গান। গেলবারও এসেছিলাম। এবারেও আসতে পেরে ভালো লাগছে।`নওশিন নামে এক দর্শক এসেছেন তিন বান্ধবী আর চার বন্ধুকে নিয়ে। তারা সবাই ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। গতকালও এসেছিলেন তারা। সবাই এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খুব খুশি। তবে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন উৎসবে ধমুপান নিষেধ সত্ত্বেও সর্বত্র অবাধ ধুমপানের চিত্র দেখে। মাসুম জাহিদ নামে এক দর্শক এসেছেন প্রেমিকাকে নিয়ে। দু’জনেই মিরপুর ১-এর বাসিন্দা। তারা জানান, বেশ ভালো লাগছে আজকের অনুষ্ঠান। গ্যালারিতে বসে স্পষ্টই দেখতে পারছেন মূল মঞ্চ। তারা কিশোর গায়ক জাহিদের গানটির প্রশংসা করেছেন। তার কণ্ঠে আরো কিছু গান শোনার প্রত্যাশা করছিলেন। কিন্তু একটি গান গেয়েই বিদায় নেয় জাহিদ। তবে দুঃখ নেই। কারণ, দু’জনেরই প্রিয় শিল্পী শফি মন্ডল ও কৈলাশ খের গাইবেন আজ। মাটির গানের টানে সুদূর কুষ্টিয়া থেকে এসেছেন আব্দুল হাকিম। বললেন, ‘আমিও বাউল গান করি। এলাকায় টুকটাক গান করে বেড়াই নানা নিমন্ত্রণে। পরশুদিন ঢাকায় এসেছি ফোক ফেস্ট উপভোগ করতে। এখানে উঠেছি বাড্ডাতে ছোট ভাইয়ের মেসে। তাকে নিয়েই এসেছি। মন ভরে গান শুনছি, গান পাগল মানুষ দেখছি। এ সত্যি এক সৌভাগ্য আমার। দুনিয়ার নামকরা সব শিল্পীদের গান সামনে বসে শোনার সুযোগ পেলাম।’মৌরি সরকার নামে এক শিশুকে পাওয়া গেল ফুড কর্নারে। মা ও বাবার সঙ্গে এসেছে সে। বাসা রামপুরায়। গান শুনতে বেশ ভালো লাগছে তার। তবে অভিযোগ করলো খাবারের দাম নিয়ে। অনেক কিছুই খেতে ইচ্ছে করলেও চড়া দাম (মৌরির ভাষায় ডাকাতি দাম) হওয়ায় আইসক্রিম খেয়েই সন্তুষ্ঠ থাকতে হচ্ছে।শুধু তাই নয়, অনেকেই আবার রেজিস্ট্রেশন না করতে পেরেও এসেছেন। আশা করছেন আয়োজকরা হয়তো কোনো একটা ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারাই এখনো প্রবেশ করতে পারেননি। তাই বাড়তি ভাবনা তাদের নেই।এদিকে আয়োজকদের প্রত্যাশা, আগামীকালও (শনিবার) সরকারি ছুটি থাকায় আজকের মতোই কালও জনসমুদ্রে ভাসবে আর্মি স্টেডিয়াম। শনিবার উৎসবের সমাপনী দিনে দেশি-বিদেশি শিল্পীদের সঙ্গে গান করবেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত দুই শিল্পী বারী সিদ্দিকী ও পবন দাস বাউল। নিজ নিজ দল নিয়ে থাকবেন ইসলাম উদ্দিন কিসসাকার ও কৌশিক হোসেন তাপসেরাও। দ্বিতীয় দিনের উৎসবে আজ শুরুতেই মঞ্চ মাতিয়েছেন বংশীবাদক জালাল, ঢুলী নজরুল ও কক্সবাজারের ক্ষুদে গায়ক জাহিদ। গান করেছেন লতিফ সরকার, কানাডার প্রসাদ, ভারতের দল ইন্ডিয়ান ওশেন। এখন মঞ্চে আছেন দিনের প্রধান আকর্ষণ বাউল শফি মন্ডল ও লাবিক কামাল গৌরব, স্পেন থেকে আগত কারেন লুগো অ্যান্ড রিকার্ডো মোরো। দিনের শেষ শিল্পী হিসেবে মঞ্চে আসবেন আজকের ভারতের শিল্পী কৈলাশ খের।এলএ/আরএস/এমএস

Advertisement