আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আভাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত না যাওয়ায় আবারো যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে- তা হলো বিএনপি চালায় কে? কারণ দলের সিনিয়র নেতারাই কথা দিয়েছিলেন তারা যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী এমন হলো যে সম্মেলনে কোন প্রতিনিধিও পাঠানো গেল না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে চিঠি দিয়ে সম্মেলনের দাওয়াত দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। গত ২০ অক্টোবর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দাওয়াত পৌঁছে দেন দলের তখনকার উপ দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ সময় মির্জা ফখরুল তাদের আপ্যায়ন করেন এবং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিমিয় করেন। মৃণালকান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিএনপির চেয়ারপারসন ও মহাসচিবকে সম্মেলনের দাওয়াত দিয়েছি। আশা করছি তারা আমাদের সম্মেলনে যোগ দেবেন। জামায়াত ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সম্মেলনের দাওয়াত দিয়েছেন বলেও জানান এ আওয়ামী লীগ নেতা।আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘আমরা দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’ এর পরদিন শুক্রবার বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এক সভায় বলেছিলেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণ জানানোয় আমরা খুশি। ওরা আসেনি তো কি, আমরা যাবো। আমরা ওদের মতো হীনম্মন্য নই।’তাদের এমন বক্তব্য এবং মন্তব্যে মানুষের মনে আশা জেগেছিল অন্তত আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে দুদলের মধ্যে একটি যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেই থেকে আলাপ আলোচনার পথ তৈরি হবে। সংলাপের প্রেক্ষাপটও তৈরি হতে পারে। কিন্তু বিএনপি এবারো সেই ভুল করল। অতীতে শেখ হাসিনার টেলিফোন আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন খালেদা জিয়া, আরেকবার খালেদা জিয়ার বাড়ির গেট থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। এবার খালেদা জিয়া বা তার প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়ে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে আসতে পারত তাহলে বিএনপিরই জয় হত।কিন্তু না যাওয়ার যে কারণ জনগণকে অবহিত করল তা খুবই হাস্যকর। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিদল যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। দেশে মিনিমাম গণতন্ত্রের পরিবেশ যদি থাকত তাহলে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপি যোগ দিত। বিএনপির বিরুদ্ধে লাগামহীন অশ্লীল, অশ্রাব্য বক্তব্য দিয়েই চলছে আওয়ামী লীগের নেতারা। এটাকে অতিক্রম করে সম্মেলনে গেলে জনগণ মেনে নিত না। প্রশ্ন হল আওয়ামী লীগ যে বিএনপিকে গালমন্দ করে আসছে সেটা কি রিজভী সাহেবরা সম্মেলন শুরুর দিন জানতে পেরেছেন, নাকি সম্মেলন শুরুর দিন থেকেই আওয়ামী লীগ বিএনপি সম্পর্কে অশ্লীল কথা বলতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ যদি লাগামহীনভাবে বিএনপিকে আজেবাজে কথা বলেই যায় তাহলে দলের মহাসচিব কেন বললেন দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ঠিক করবেন, আর যুগ্ম মহাসচিব আলাল কেনই বা বলেছিলেন তারা আওয়ামী লীগের মত হীনম্মন্য নন, বিএনপি সম্মেলনে যাবেই। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে দলের কোন ফোরামে কবে আলোচনা করে বিএনপি আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের দাওয়াত পাওয়ার পর আমরা বিএনপির কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠক ডাকার খবর পাইনি, অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ওই রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটাও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়নি। তার মানে কেউ না কেউ কলকাঠি নেড়েছে যেন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির কোন নেতা যোগ না দেয়। ওই ব্যক্তিটি কে বা ব্যক্তিরা কারা? বুদ্ধিমান মানুষ সহজেই অনুমান করতে পারেন হতে পারেন তিনি বিএনপির নির্বাসিত নেতা তারেক রহমান অথবা হতে পারে জামায়াত। কারণ জামায়াতকে দাওয়াত না দেওয়ায় বিএনপির ভেতরে চেপে বসা জামায়াতি ভূত ওই পরামর্শ দিতে পারে। জামায়াতের থিঙ্ক ট্যাংক বলে পরিচিত ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকও অনেকদিন ধরে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত। রাজনৈতিক মহলে আলোচিত যে রাজ্জাক তারেক রহমানকে নানা উপদেশ বা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিএনপিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া আর কারো কথার যে দাম নেই সেটাও স্পষ্ট হয়েছে অনেক আগেই। যখন দলের মহাসচিব পর্যায়ের নেতা বলে দলীয় ফোরামে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিবেন তখন ফোরামের থোরাই কেয়ার করে তারেক রহমান বা তার মা ছাড়া কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর আরেক নেতা আরেক ধাপ এগিয়ে বলে দিয়েছিলেন বিএনপি আওয়ামী লীগের মত হীনম্মন্য নয়। এখন তিনি এর কী জবাব দিবেন সেটা আঁচ করতে পেরে কয়দিনের জন্য থাইল্যাণ্ড গিয়ে বসে আছেন। বারবার বিএনপির এরকম ভুল আর সিদ্ধান্তহীনতায় দলটিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। অথচ গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষের ভালোর জন্য বিএনপিকে শক্তি সঞ্চয় করে ঘুরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। শক্তিশালী বিরোধীদল না থাকলে ক্ষমতসীনরা যে কর্তৃত্ববাদি হয়ে ওঠে এটা বিএনপির চেয়ে ভাল আর কার বোঝার কথা? বিএনপির শুভাকাঙ্খী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ যথার্থই বলেছেন, সবকিছুতেই বিএনপিতে সিদ্ধান্তহীনতা মারাত্মক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ। এইচআর/আরআইপি
Advertisement