বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর। নামে আন্তর্জাতিক হলেও কাজে এখনো অভ্যন্তরীণ ধরন নিয়ে চলছে এ বিমানবন্দরটি। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশনা মোতাবেক বোয়িং-৭৭৭ অবতরণে ক্যাটাগরি-৮ মান বাধ্যতামূলক হলেও শাহ আমানতের ক্যাটাগরি-৭। তবে এ নির্দেশনা অমান্য করে ঝুঁকি নিয়ে বোয়িং-৭৭৭ অবতরণ করানো হচ্ছে বলে শাহ আমানত বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এটি একটি বড় সমস্যা। বিমানবন্দরটিতে বোয়িংয়ের মতো সুপরিসর এয়ারক্র্যাফট অবতরণ ও উড্ডয়ন করছে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে।স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অনেকাংশে উন্নতি হলেও তা চাহিদা উপযোগী নয় উল্লেখ করে বিষয়টি সহসা সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার রিয়াজুল কবির জানান, বিমানবন্দরটিতে প্রতিদিন প্রায় ৮৪টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এর মধ্যে ৯ থেকে ১১টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রয়েছে। এছাড়া সপ্তাহে দুটি কার্গো যাতায়াত করে।এতদিনেও বিমানবন্দরটিকে কেন ক্যাটাগরি-৮-এ উন্নীত করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমানবন্দরটিতে বোয়িং অবতরণের সময় ক্যাটাগরি-৮ চাহিদা মোতাবেক ফায়ারসহ সব বিভাগের যাবতীয় সরঞ্জামাদি প্রস্তুত রাখা হয়। পরে আবার সেগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। এতে কোনো সমস্যা হয় না।জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোড়াপত্তন চল্লিশের দশকের শুরুতে এয়ারফিল্ড হিসেবে। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্র পক্ষের যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সরবরাহের জন্য এ এয়ারফিল্ড তৈরি করা হয়, যা পরে ধীরে ধীরে বিমানবন্দরে রূপ নেয়।বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটি বাণিজ্যিক অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। বাংলাদেশ বিমান মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই ও সৌদি আরবে যাত্রী পরিবহন শুরু করলে বিমানবন্দরটি ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ নেয়। তবে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি দেওয়া হয় প্রায় ২৩ বছর পর ২০১৩ সালে।এর আগে জাপানি সংস্থা জাইকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ১৯৯৮ সালে বিমানবন্দরটির আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। ৫৭০ কোটি টাকা (৫১.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয়ে এই কাজ শেষ হতে সময় লাগে প্রায় দুই বছর। পরে ২০০১ সালে চট্টগ্রাম এম এ হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে নতুন অবয়বে যাত্রা শুরু করে।১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরটির নাম ছিল চট্টগ্রাম এম এ হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিএনপি সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা হয়।বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দেশের এ দ্বিতীয় বৃহত্তর বিমানবন্দর দিয়ে মালামালও পরিবহন হচ্ছে বিশ্বের নানা গন্তব্যে। বিমানবন্দরটি থেকে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান ছাড়াও এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, মালিন্দো এয়ারলাইন্স ও ওমান এয়ারে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এক সময় থাই এয়ারওয়েজ এবং তারও আগে সিল্ক এয়ারওয়েজ (সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের অঙ্গ সংস্থা) চট্টগ্রাম দিয়ে উড়োজাহাজ চলাচল করলেও পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।এ বিষয়ে চট্টগ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী কাইয়ুম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়া সত্ত্বেও শাহ আমানত বিমানবন্দর প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায়নি। অথচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি সংযোগস্থল হতে পারে এ বিমানবন্দরটি। চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের জন্য সব সরকারই অবহেলা করছে। তবে চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা আগামী দিনে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে।আরএম/আরএস/এবিএস
Advertisement