সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা বেগমের ওপর যে পৈশাচিক হামলা চালানো হয়েছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। একের পর এক এ ধরনের অমানবিক ও পৈশাচিক ঘটনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এর শেষ কোথায়? তনু, মিতু, আফসানা, রিশার পর এবার খাদিজার ওপর হামলা হলো। অপরাধারীরা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। প্রকাশ্য দিবালোকে জনারণ্যে চাপাতির কোপে ক্ষতবিক্ষত করছে তারই পরিচিত জনকে। একি বর্বরতা। এই দুঃসাহস দুর্বৃত্তরা পায় কোত্থেকে? এদের কি রুখে দেওয়ার কেউ নেই? আইন প্রশাসন এগুলো তাহলে কী জন্য? কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। একটি মানবিক সমাজ বিনির্মাণে এর প্রতিকার হতেই হবে। এবারের শিকার কলেজছাত্রী খাদিজা। তিনি সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত সোমবার পরীক্ষা দিতে সিলেটের এমসি কলেজে গিয়েছিলেন। পরীক্ষা শেষে ফেরার সময় এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে খাদিজাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলম (২৬)। বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। ঘটনার এক পর্যায়ে লোকজন এগিয়ে এসে খাদিজাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত সে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বদরুলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মানুষজন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ধিক্কার ওঠে এই চরম নৃশংসতা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে।বদরুল খাদিজাদের বাড়িয়ে লজিং থাকতো। তখন থেকেই সে খাদিজাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে অনেক ঘটনাও ঘটায় সে। খাদিজার বাবা ও ভাই বিদেশ থাকায় খাদিজা আরো অসহায় হয়ে পড়ে। অন্যদিকে বদরুল দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বদরুল ছাত্রলীগ নেতা। তার অপরাধকে ছাত্রলীগ ব্যক্তিগত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করলেও চাপাতি দিয়ে প্রকাশ্যে কোপানোর মতো দুঃসাহসিকতার নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে তার সাংগঠনিক পরিচয়ই। এটা অস্বীকার করা যাবে না। এক্ষেত্রে বদরুলের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং খাদিজার পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ তাদের দায় কিছুটা মোচন করতে পারে। কারণ এ ধরনের বেপরোয়া আচরণ কিন্তু এই প্রথম নয়। এই ঘটনা জন্ম দিয়েছে আরো অনেক প্রশ্নের। একটি অসহিষ্ণু সমাজ ব্যবস্থার দিকে কি আমরা এগুচ্ছি? কেন একের পর এক ঘটছে এসব বর্বরতা, পৈশাচিকতা। গলদটা কোথায়? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তো তাদের দায়িত্ব পালন করতেই হবে। পাশাপাশি সমাজ বিশ্লেষকদের খুঁজে বের করতে হবে সমাজে কেন বদরুলরা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে যদি বদরুলদের সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে আমরা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?এইচআর/এবিএস
Advertisement