চিকিৎসকের কাজ হচ্ছে সেবা দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা করা। কিন্তু এর বদলে তারা যদি জীবনহানির কারণ হন এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে এমন দুটি ঘটনা ঘটলো যাতে চিকিৎসার মতো মহান পেশায় নিয়োজিতদের দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুই জন জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসরা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্বজনদের মধ্যে। চিকিৎসা ব্যবস্থার এক করুণ চিত্রই ফুটে উঠছে এর মধ্য দিয়ে। এ অবস্থার অবসানে দায়ী চিকিৎসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। চট্টগ্রামে বেসরকারি সিএসসিআর ক্লিনিকে সোমবার রাত ১টায় জন্মগ্রহণ করে এক নবজাতক। কয়েক ঘন্টা পর নবজাতকের মৃত্যুর সনদ দিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। মৃত্যু সনদে লেবার ওয়ার্ডের মেডিকেল অফিসার ডা. রুমার স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু নবজাতকের মা ডা. রিদওয়ানা কাউসার তুষার তার সন্তানের মৃত্যু নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। প্যাকেট খুলে তিনি দেখতে পান তার বাচ্চা দিব্বি নড়াচড়া করছে। তিনি দ্রুত বিষয়টি হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের জানালে তারা নবজাতকের মৃত্যুর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। পরে মা ডা. রিদওয়ানা নিজেই বাচ্চাকে চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে বেড খালি না পাওয়ায় মেহেদীবাগস্থ ম্যাক্স হসপিটালে নিয়ে নবজাতককে ভর্তি করানো হয়। দেখা যায় বাচ্চাটি জীবিত।একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটে গত ২২ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে ডা. জাহিদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে। সেখানে জন্মের পর এক নবজাতককে মৃত ঘোষণা করা হয়। এরপর শিশুটিকে কবর দিতে কার্টনে করে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ছয়টায় কবর দেওয়ার আগে মৃত নবজাতকের মাথা কোন দিকে রয়েছে তা দেখার জন্য কার্টনটি খোলা হয়। আর তখনই কেঁদে ওঠে নবজাতক। নানা চেষ্টা করেও শিশুটি বাঁচানো যায়নি। ২৬ সেপ্টেম্বর মারা যায় শিশুটি। এর পেছনে চিকিৎসকের অবহেলায়ই যে দায়ী সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। চট্টগ্রামের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট যেন আলোর মুখ দেখে। সে অনুযায়ী যেন ব্যবস্থায়ও নেয়া হয়। চট্টগ্রামে যে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল তার মাও একজন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও যদি এ ধরনের অবহেলা কাজ করে তাহলে বাকি রোগীদের কী অবস্থা সহজেই অনুমেয়। চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু চিকিৎসকের কারণে সব কিছু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এটা হতে পারে না। তাই চিকিৎসাক্ষেত্রে কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতাকে প্রশ্নয় দেয়া হবে না-এমনটিই কাম্য।এইচআর/পিআর
Advertisement