কবি বলেছেন ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’। ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পূর্ণিমার চাঁদকেও ঝলসানো রুটি মনে হয়। এটি চরম বাস্তবতা। তাই ক্ষুধা-দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম নিরন্তর। এই সংগ্রামে যখন কোনো দেশের সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তখন তা ওই দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়। এ রকমই এক অর্জনের স্বীকৃতি মিললো এবার বিশ্বব্যাংকের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশের অতি দারিদ্র্য পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। অতি দারিদ্র্যের হার ১২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যা ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ। এটা খুবই আশার কথা যে বাংলাদেশের অতি দারিদ্র্য পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। সাত বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮০ লাখ হতদরিদ্র লোক অতি দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠেছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার ‘টেকিং অন ইন-ইকোয়ালটি’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সেখানে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের এ চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে ২ কোটি ৮০ লাখ হতদরিদ্র লোক ছিল। চলতি অর্থবছরে তা ২ কোটিতে নেমে এসেছে। এরা প্রতি মাসে ১ হাজার ২৯৭ টাকাও আয় করতে পারেন না। শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা ও সফল পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এ দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করেছে বলেও মন্তব্য করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের এই মূল্যায়ন নিশ্চয়ই দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিকে আরো গতিশীল করবে। বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে সরকার নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বয়স্কভাতাসহ চালুসহ রয়েছে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি। উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূর করা সম্ভব হয়েছে সরকারের বাস্তবমুখি পদক্ষেপের কারণে। দারিদ্র্যকে সঙ্গে করে একটি দেশ খুব বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারে না। এতে সামাজিক বৈষম্য প্রকট আাকার ধারণ করে। কাজেই বৈষম্যমুক্ত একটি সমাজতথা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে দারিদ্র্য দূর করতে হবে। এজন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক একটি ব্যবস্থাই পারে দারিদ্র্যসহ সকল ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে। দারিদ্র্য বিমোচনে একসঙ্গে কাজ করাটাই হোক সকলের লক্ষ্য। এইচআর/এমএস
Advertisement