দেশজুড়ে

পর্যটকে প্রাণ চঞ্চল কক্সবাজার

কুরবানির ঈদকে উপলক্ষ্য করে প্রাণ ফিরেছে দেশের পর্যটন রাজধানীখ্যাত সৈকত নগরী কক্সবাজার। শুক্রবার থেকে খণ্ড খণ্ডভাবে আসতে থাকা পর্যটকে বুধবার ভরপুর হয়েছে এখানকার হোটেল-মোটেল, গেস্ট ও রেস্ট হাউসগুলো। পদচারণা বেড়েছে সৈকতের বালিয়াড়িতেও। জেলার অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় জমছে। এতে পর্যটনসংশ্লিষ্টদের মাঝে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে পর্যটকদের চাহিদা থাকলেও বৈরি আবহাওয়ার কারণে চালু হয়নি দেশের প্রসিদ্ধ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের জাহাজগুলো।  পর্যটকদের সমুদ্র স্নান ও পর্যটন স্পটে নিরাপদে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন, লাইফ গার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন মানতে পর্যটকদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র মতে, ঈদের ছুটিতে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে কক্সবাজারে। এ বছরো ব্যতিক্রম হয়নি। প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তবে অন্য বছরের ন্যায় উপচে পড়া ভিড় নেই। আগেই কক্সবাজারের চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট ও রেস্ট হাউসের অধিকাংশ রুম বুকিং হয়ে গিয়েছিল। দেশে ষড়ঋতু নিয়মের ব্যতিক্রমে চলায় প্রবল বৃষ্টিপাতের শঙ্কায় পর্যটক সমাগম নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রকৃতি সংশয় কাটিয়ে দিয়েছে। এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পর্যটন স্পটগুলো।হোটেল-মোটেল মালিকরা বলছেন, পর্যটকরা কক্সবাজার এলে কেবল শহরের সমুদ্র সৈকতেই ঘুরে বেড়ান না, পাশাপাশি ইনানীর পাথুরে সৈকত, হিমছড়ির পাহাড়ি ঝরনা ও দরিয়ানগর পর্যটনপলি­, টেকনাফের মাথিনক‚প, কুদুমগুহা, নেচার পার্ক, নাফ নদীর জালিয়াদ্বীপ, মিয়ানমার সীমান্ত, প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধপলি­সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে যান।পর্যটকদের সমুদ্র দর্শনের জন্য সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে চলছে চেয়ার ও ছাতা বসানোর কাজ। পর্যটকেরা সমুদ্র দর্শনের জন্য চেয়ারে বসলে হকার কিংবা বখাটেরা যাতে উৎপাত না করে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হবে। পর্যটকের সঙ্গে ভালো আচরণ করার জন্য কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সৈকতের চেয়ার-ছাতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটক আগমন বেড়েছে। সরগরম হয়ে উঠেছে হোটেল, মোটেল, রেস্তুরা, চা দোকানসহ দর্শনীয় স্থানগুলো। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন।  কলাতলীর লেগুনা বিচ হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পরিচালক শাহজাহান আনসারী ও কক্স-টু-ডে’র ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় ঈদের ছুটির এ যাত্রা দিয়ে পর্যটন মৌসুমে আবাসন ব্যবসা ভালো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরেজমিন হোটেল মোটেল জোন এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেল জোনের সব হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। মহেশখালী আদিনাথ, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকের পদভারে মুখরিত। কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির ও রামুর বৌদ্ধ বিহারেও প্রচুর পর্যটকের ভিড় দেখা যায়।কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, ঈদের পর থেকে দুই শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ পূর্ণ হয়ে গেছে। ঈদের ছুটির পর বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরকারি অফিস খুললেও শুক্র-শনিবার আবারো সাপ্তাহিক ছুটি পড়ায় পর্যটকের উপস্থিতি আরো দুদিন থাকবে।চট্টগ্রাম থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা তরুণ ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন জানান, যান্ত্রিক জীবন মাড়িয়ে একটু প্রাণের স্পন্দন নিতেই এখানে ছুটে আসা। ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেদের ভাসিয়ে সমস্ত গ্লানি নির্মূলের চেষ্টা করছেন তারা।  ঈদের ছুটিতে ভিড়ের মাঝে পর্যটকরা কক্সবাজারে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন তারই লক্ষ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশও বেশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বি। তিনি জানান, ঈদের ছুটিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের লোকবল বাড়ানো হয়েছে। পর্যটক নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সি-ইন ও লাবণী পয়েন্ট সৈকতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা থাকছে। এছাড়া হিমছড়ি, দরিয়ানগর ও ইনানী পর্যটন স্পটে রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সৈকতের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি পয়েন্টে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দফতর বা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী বলেন, টানা কয়েক দিনের ছুটিতে অন্তত কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন এমনটা ধরে নিয়েই কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে কক্সবাজারকে পর্যটকদের জন্য নিরাপদ রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা।ঈদের পরদিন টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, এর জন্য টেকনাফের দমদমিয়ার জেটিঘাটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। প্রমোদতরিতে (জাহাজ) অতিরিক্ত ভাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।লাবণী পয়েন্ট ছাড়া ১১০ কিলোমিটার সৈকতের অন্য কোথাও গোসলে নামা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। গোসলে নামার আগে পর্যটকদের জোয়ার-ভাটার সময় দেখে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত লাইফগার্ড পরিচালক ছৈয়দ নূর। তিনি বলেন, জোয়ারের সময় সৈকতে সবুজ পতাকা ওড়ানো থাকে। তখন সৈকতে নামা যায়। ভাটার সময় ওড়ানো থাকে লাল নিশানা। তখন সমুদ্রে নামা বিপজ্জনক। এরপরও আমরা দূরবীন দিয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, সৈকতের আচরণ সম্পর্কে অবহিত করতে লাইফগার্ডসহ পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। অনেক সময় তাদের সতর্কবাণীও না শুনায় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় পড়ে বিপদাপন্ন হচ্ছেন অনেক পর্যটক। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) এর চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, যে কোনো ধরনের উৎপাত রোধ করে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছন্দ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় রয়েছে। ভবিষ্যতে দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত গড়তে নানা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।সায়ীদ আলমগীর/এআরএ/এমএস

Advertisement