মঞ্চ নাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন শামীমা নাজনীন। ১৯৯৪ সালে ইডেন কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স করার পর ’৯৬ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তিনি নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। প্রথম অভিনয় করেন আলী যাকেরের নির্দেশনায় ‘ঠাট্টা তামাশা’ নাটকে। এরপর দেওয়ান ‘গাজীর কিসসা’, ‘অচলায়তন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘কাঁঠালবাগান’ নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। শামীমা নাজনীনকে টিভি নাটকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ করে দেন হুমায়ূন আহমেদ তার ধারাবাহিক নাটক ‘সবুজ ছায়া’তে ১৯৯৮ সালে। এরপর তার পরিচালনায় অনেক নাটকে অভিনয় করে শামীমা নাজনীন হয়ে ওঠেন ব্যাপক দর্শকপ্রিয়। সময়ের হাত ধরে আজ তিনি জনপ্রিয় মুখ। তার সাবলীল অভিনয় মুগ্ধতা দেয় দর্শকদের। নাটক-টেলিছবির পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি গাজীপুরের পুবাইলে দেখা হলো তার সঙ্গে মিনহাজ আল দ্বীনের পরিচালনায় ‘নিখোঁজ’ টেলিছবির শুটিং সেটে। আড্ডার ছলে তিনি জানালেন এই টেলিছবির গল্প ও নির্মাণ কথা। পাশাপাশি কথা বললেন সমকালীন অনেক কিছু নিয়ে। জাগো নিউজ : কেমন আছেন আপা? শামীমা নাজনীন : আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। তোমরা কেমন? জাগো নিউজ : জ্বি ভালো। আপা, নতুন টেলিফিল্মের চরিত্রটি কেমন উপভোগ করছেন? শামীমা নাজনীন : আসলে ভাই মনের মতো চরিত্র খুব একটা পাই না। ওই সবই গৎ বাধা মা-ভাবী আর মুখস্ত সব ডায়ালগ। কেবল পরিচালক আর প্রেক্ষাপটটা আলাদা। সেদিক থেকে এই টেলিফিল্মের চরিত্রটি বেশ ভালো লেগেছে। একজন মা যে কিনা নিখোঁজ হওয়া ছেলেকে খুঁজে ফিরছে। অনেক করে অবশেষে জানতে পারে তার ছেলেটি পানিতে ডুবে মারা গেছে। একটা ইমোশন আছে। গল্পের সঙ্গে চরিত্রটির সম্পর্কটিও গভীর। এক কথায় ভালো লেগেছে ‘নিখোঁজ’ টেলিফিল্মে কাজ করে। জাগো নিউজ : অনেক অভিজ্ঞ আর জনপ্রিয় নির্মাতাদের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। সে তুলনায় মিনহাজ আল দ্বীন নতুন। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? শামীমা নাজনীন : মিনহাজ নতুন হলেও পরিচালনার কাজটি সে বেশ গোছানো ও পরিচ্ছন্ন। ক্যামেরার সঙ্গে গল্প ও চরিত্রের সম্পর্কটা সে ভালো বুঝতে পারে। প্রতিটি দৃশ্যকে সে কল্পনা অনুযায়ী না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা করে। আর ও অনেক গুণের ছেলে। নিজে লিখে নিজেই পরিচালনা করছে। আরো মজার ব্যপার ও নিজেই শুট হওয়া সব দৃশ্য এডিট করছে। আসলে মিনহাজকে আমার কাছে বেশ মেধাবী মনে হয়েছে। আর ওর গল্প ভাবনা বেশ চমৎকার। ভিন্ন কিছু নিয়ে কাজ করার মানসিকতা আছে। একদিন ও ভালো করবে। জাগো নিউজ : একটু আগে গৎ বাঁধা চরিত্রের কথা বলছিলেন। আজকাল নাটকের গল্পেও তেমন বৈচিত্র পাওয়া যায় না। মান নিয়েও অনেক অভিযোগ আছে। এইসব কারণে দর্শক বিরক্ত হয়ে বিদেশি চ্যানেলের দিকে ঝুকছে। আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন? শামীমা নাজনীন : অভিযোগ মিথ্যে নয়। আগে একটা নাটকের কাজ করলে অপেক্ষায় থাকতাম কবে এটি প্রচার হবে। কিন্তু এখন কাজ করতে করতে নিজেই বুঝতে পারি এই নাটক বা টেলিফিল্মটি ভালো হচ্ছে না। তবে এর দায় নির্মাতাদের নয়। আর গল্পকারদেরও নয়। ভালো বাজেট না হলে কিছুই ভালো হবে না। বেশি বাজেট দিন ভালো গল্প আসবে, ভালো চরিত্র দাঁড়াবে। আর নির্মাতাকে কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে। তিনি ও গল্পকার মিলে চরিত্র বাছাই করবেন। কোনো চ্যানেল বা এজেন্সির হাতে এই দায়িত্ব থাকতে পারে না। দর্শক ফিরাতে হলে তাই নাটককে দোষ না দিয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞাপন নিয়েও চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন দাতাদের কার্যকরী কৌশল অবলম্বন করতে হবে। জগতের সব দেশেই টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যা হচ্ছে সেটা বাড়াবাড়ি বললেও কম বলা হয়। জাগো নিউজ : আপনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু চলচ্চিত্রে আপনি নিয়মিত হলেন না। কেন? শামীমা নাজনীন : এর উত্তর আমিও জানি না। ইচ্ছে তো ছিলোই শিল্পের সবচেয়ে বড় মাধ্যম চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করবো। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। তবে এই কথাটা বলা যায়, হুমায়ূন আহমেদ স্যার আমাকে যেসব চরিত্রে ভেবেছেন, জনপ্রিয় করেছেন সেইসব চরিত্রের বাইরে গিয়ে কেউ আমাকে ভাবতে পারেননি বলে চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগটা হয়নি। আর যেসব চরিত্রে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি সেইগুলো গল্পের মান নিয়ে আপত্তি ছিলো। সবাই হুমায়ূন আহমেদের মতো চরিত্র বানিয়েছেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের মতো তো সেগুলো হবে না। দর্শকও গ্রহণ করবে না। তাই কাজ করার আগ্রহ পাইনি। এ নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই। আমি মঞ্চ থেকে আসা শিল্পী। সবসময় ভালো কাজের চেষ্টা করেছি। সেটা টিভি না সিনেমা তা ভাবিনি। জাগো নিউজ : আপনি তো পরিচালনাও করেছেন। কিন্তু অনেকদিন নির্মাণে নেই। পরিচালক শামীমা নাজনীনকে কী আর দেখবে না দর্শক? শামীমা নাজনীন : আমি আসলে শখের নির্মাতা। অভিনয় করতেই বেশি ভালোবাসি। পরিচালনা আমার কাছে অনেক সম্মানের বিষয়। সেই ভাবনা থেকেই কিছু কাজ করেছিলাম। আবারো যদি কখনো ভালো গল্প ও সুযোগ মিলে তবে অবশ্যই দর্শক আমার পরিচালিত নাটক-টেলিফিল্ম দেখতে পাবেন। দোয়া করবেন সে পর্যন্ত যেন বেঁচে থাকি। জাগো নিউজ : সম্প্রতি টিভি নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ডের নির্বাচন হয়ে গেল। এসেছে নতুন নেতৃত্ব। এই সংগঠনটির কাছে আপনার প্রত্যাশা কেমন? শামীমা নাজনীন : প্রত্যাশার তো শেষ নেই। আমি চাইব টিভি মিডিয়াতে যতো অনিয়ম ও অস্থিরতা সেইসব দূর হবে। প্রতিটি শিল্পী যে যেখানেই কাজ করুক তার স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা হবে। ভালো নাটক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দিয়ে দর্শক ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিতে হবে। হয়তো অনেক কিছুই হবে না। তবুও তো কিছু হবে। এই কিছুটাও তো হচ্ছিলো না। আমি ডিরেক্টর`স গিল্ডে নেতৃত্বে আসা এবং নির্বাচনে অংশ নেয়া সকল নির্মাতাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। এলএ/এনই/পিআর
Advertisement