মতামত

আত্মঘাতী ছাত্রলীগকে সামলান

শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেখানে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের আদর্শিক নেতাকে স্মরণ করবে সেখানে উল্টো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা। তাও আবার শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে ১ আগস্টের প্রথম প্রহরে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা নিয়ে  ঘটে এই সংঘর্ষ। রোববার মধ্য রাতের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে  প্রাণ হারিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র ও কবি নজরুল হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ। আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রছাত্রীদের হল ত্যগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। দুঃখজনক যে দেশ যখন জঙ্গিবাদসহ নানা ধরনের সংকট অতিক্রম করছে ঠিক সেই সময়ে সরকারি দলের সহযোগী এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মেতেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। নীতি আদর্শের সামান্য কোনো বালাই যে এদের মধ্যে নেই সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।  চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্যসহ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। অপেক্ষাকৃত নবীন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগ এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই দুঃখজনক প্রাণহানি। এ ধরনের মৃত্যুর কোনো সান্ত্বনা নেই। মা-বাবা সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান লেখা পড়া শিখে মানুষ হওয়ার জন্য। লাশ হয়ে বাড়ি ফেরার জন্য নয়। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পরও তারা থামছে না। টেন্ডারবাজি থেকে ভর্তিবাণিজ্য- সব কিছুতেই সংগঠনটি অপ্রতিরোধ্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন্তঃকলহ। এই আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষার পরিবেশ । সংঘর্ষের পর হল তল্লাশি করে পিস্তলসহ নানা ধরনের অস্ত্র পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে হলগুলো অস্ত্রকারখানা হয়ে উঠে কী করে- সেটাই এক বড় প্রশ্ন। এখানেও আশ্রয়-প্রশ্রয়ের নানা ঘটনা ঘটে। আছে ক্ষমতাকেন্দ্রিক নানা মেরুকরণ। জঙ্গিবাদের চরম উত্থানের সময় যখন ঐহিত্যবাহী ছাত্রলীগ একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্য দিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে সেখানে নিজেরাই জড়াচ্ছে মরণাঘাতী সংঘর্ষে। বেদনার মাস আগস্ট কেন্দ্রিক কর্মসূচিতেও নেই কোনো মনোযোগ। বন্ধবন্ধুর প্রবাদতুল্য যে আদর্শিক সংগ্রামী জীবন সেটি তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতায়ই মেতে থাকে ছাত্রলীগ। স্মরণিকা প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামমুখর জীবনের নানা দিক নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও তারা হাতে নিতে পারে। কিন্তু কে হায় নগদ নারায়ণ ছেড়ে আদর্শের লড়াই করবে? এভাবে চলতে পারে না।  ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ এদেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগকে কপিতয় দুষ্কৃতিকারীর কাছে জিম্মি হতে দেয়া যায় না। অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংঘর্ষের কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার শর্টকাট রাস্তায় না গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে ব্যাপক সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তায় ফেলার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। এইচআর/পিআর

Advertisement