কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের সফল অভিযানের পর জঙ্গিরা একটি বার্তা পেল। সেটি হচ্ছে সরকার যে কোনো মূল্যে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে বদ্ধপরিকর। এই অভিযান নিঃসন্দেহে পুলিশ বাহিনীর একটি বড় সাফল্য। যখন একের এর এক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে এবং দেশের মানুষ যখন জঙ্গিবাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে তখন জঙ্গি হামলা অঙ্কুরেই নষ্ট করে দেওয়া স্বস্তির বিষয়। আমরা এই সফল অভিযানের জন্য পুলিশ বাহিনীকে অভিনন্দিত করি। ভবিষ্যতে এভাবেই সকলের সহযোগিতায় সকল অপতৎপরতা রুখে দেওয়া সম্ভব হবে বলেও আশা করি। ২৬ জুলাই সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কল্যাণপুরে ‘জাহাজ বাড়ি’ নামে পরিচিত জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬` নামে অভিযান চালায় পুলিশ্। এর আগে মধ্যরাত রাত থেকেই বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ভোরের দিকে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াত জঙ্গিদের আস্তানায় হামলা চালায়। ৯ জঙ্গি সেখানেই মারা যায়। একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে। একজন পালিয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। আস্তানা থেকে জঙ্গিদের বেশ কিছু কালো পোশাক, পতাকা, ১৩টি তাজা গ্রেনেড, চার থেকে পাঁচ কেজি জেল বিস্ফোরক, ১৯টি ডেটনেটর, চারটি পিস্তলসহ অন্যান্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এই হামলায় নিহত জঙ্গিদের সাথে গুলশান হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের যোগাযোগ থাকতে পারে এমন কথাও বলছে পুলিশ। এই অভিযানের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে সাধারণ মানুষ এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই জঙ্গিদের নিপাত করা গেছে। এছাড়া সাধারণ মানুষও এই অভিযানে নানাভাবে সহায়তা করেছে। এটিই সবচেয়ে বেশি জরুরি। জঙ্গিবাদ যে কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না এটি যত তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠা করা যাবে জঙ্গি দমনও ততো সহজ হবে। যারা নিহত হয়েছে এখন তাদের নাম পরিচয় বের করে হোতাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। এরা যে বড় ধরনের নাশকতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেটি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। তাই এ ধরনের অপতৎপরতা যেন কোথাও চলতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গিদের বাড়িভাড়া না দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। এরপরও জাহাজ বাড়িতে কী করে ওই জঙ্গিরা আস্তানা গাড়তে পারলো সেটি দেখতে হবে। বাড়িওয়ালাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানের পর বাড়ি খালিও্ করে দেওয়া হয়েছে। এ থেকে বাড়িওয়ালাদের নতুন করে সতর্ক হতে হবে। ভাড়াটিয়ার তথ্য যাচাই-বাছাই করে তবেই বাড়িভাড়া দিতে হবে। কল্যাণপুরের অভিযান জঙ্গি দমনে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই অভিযানের সাফল্য ধরে রাখতে হবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারে সাফল্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন এই উগ্রবাদীরাও হালে পানি পাবে না যদি জনমানুষকে সচেতন করে তোলা যায়। এইচআর/এমএস
Advertisement