দখল দূষণে মানুষজন এখন দিশাহারা। বিশেষ করে শিল্পকারখানার আশপাশের এলাকার কৃষকরা এ নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। শিল্প কারখানার অপরিশোধিত তরল বিষাক্ত বর্জ্য স্থানীয় খালবিলে মিশে পানি দূষণ তো করছেই, ছড়াচ্ছে আবাসিক এলাকায় ও আবাদী জমিতেও। ফলে শুধু নদী-নালার পানিই দূষিত হচ্ছে না দূষিত পানি আশপাশের মাটিতে মিশে সেখানকার জনজীবনকে করে তুলছে মারাত্মক বিপর্যস্ত। বিষাক্ত পানির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে আর্সেনিক, পচা জৈব উপাদান, দ্রবীভূত ও অদ্রবীভূত লবণ, সোডা, ক্ষতিকারক ক্রোমিয়াম; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব পদার্থ আবাদী জমিতে মিশে মারাত্মক দূষণের ফলে ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলদ গাছেরও ফলন হ্রাস পেয়েছে। গাছগাছালি জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। উৎপাদিত ফসলের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে। গবাদিপশুর ঘাস পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলকার লোকজন। অপরদিকে নদী দূষণও অব্যাহত আছে। হাজারীবাগের ট্যানারি বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদী। মানবসৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য থেকেও মারাত্মক এই ট্যানারির জৈব বর্জ্য। কিন্তু এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। নদী দূষণ নিয়ে এত কথা, এত লেখালেখি, পরিবেশ সংগঠনগুলোর আন্দোলন এমনকি খোদ হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও তা বন্ধ হচ্ছে না। বিশেষ করে ট্যানারির বর্জ্যে নদীর মরাত্মক দূষণ হলেও এখনও তা বন্ধ হচ্ছে না। হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা ১০ বছরেও কার্যকর হয়নি। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। ট্যানারির তরল বিষাক্ত বর্জ্য স্থানীয় জলাশয় থেকে হাজারীবাগ খাল হয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বাঁধের ভেতরের স্লুইস গেটসহ নানা পথে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে মেশে।ঢাকার পাশে চার নদীর দূষণ বন্ধে এ পর্যন্ত কম পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কিন্তু দূষণ অব্যাহত আছে। বুড়িগঙ্গায় যাতে কেউ বর্জ্য ফেলতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বর্জ্য ফেলা রোধে নদীর দুই পারে সচেতনমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি বা ভ্যানের মাধ্যমে নদীতীরে ময়লা ফেলাও বন্ধ করতে হবে।নদী দূষণ এখন শুধু নদীর পানিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, তা আশপাশের জনপদকেও করে তুলছে মারাত্মক দূষিত। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার বর্জ্য গিয়ে নদীর পানি দূষণ করছে। আর দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের আবাসিক এলাকা, আবাদী জমিতে। ফসলি জমি এমনভাবে নষ্ট হয়ে কালো হয়ে গিয়েছে যে তা খালি চোখেই দেখা যায়। এছাড়া মাটি পচে গিয়ে মারাত্মক দুর্গন্ধও ছড়ায় তা। এরফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো রয়েছেই, জমিতে ফসলও ফলছে না। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে এখনই এর একটা বিহিত করা দরকার। অভিযোগ রয়েছে, নদী ও আবাদী জমি দূষণের সঙ্গে জড়িত অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। বছরের পর বছর কোন ইটিপি ছাড়াই তা চলছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে হবে যাতে অপরিশোধিত বর্জ্য কোন অবস্থাতেই তারা ফেলতে না পারে। এ জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে সক্রিয় হতে হবে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চালাতে হবে। নদীনালা, আবাদী জমি সর্বোপরি এলাকার মানুষজনকে দূষণের কবল থেকে বাঁচাতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।এইচআর/পিআর
Advertisement