তিন বছর আগে পাকিস্তানের মুলতান শহর থেকে আল কায়েদা জঙ্গিরা অপহরণ করেছিল পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানীর ছেলে আলী হায়দার গিলানীকে। গত তিন বছর তাকে অপহরণকারীরা কীভাবে রেখেছিল বা কীভাবে ফিরে এসেছেন, সেসব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন হায়দার গিলানী। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হায়দার গিলানী বলেন, আল কায়েদার জঙ্গিরা হায়দারকে আটকের পর জানিয়েছিল যে তার বাবা ইউসুফ রাজা গিলানীর উপর প্রতিশোধ নিতেই তাকে অপহরণ করা হয়েছে।অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবির পাশাপাশি পাকিস্তানের কারাগারে আটক আল কায়েদার কয়েকজন বন্দির মুক্তিও দাবি করে।অপহরণের পর হায়দারকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে দুিই বছর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।একটি ছোট্ট কক্ষে হায়দারকে আটকে রাখা হয়েছিল এবং এক বছর বাইরের কোন কিছু দেখতে দেয়া হয়নি। সূর্যের আলো কী জিনিস সেটাও ভুলে গিয়েছিলেন হায়দার। আল কায়েদা জঙ্গিরা গিলানীকে শারীরিকভাবে কোন নির্যাতন না করলেও তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। এক পর্যায়ে আল কায়েদা জঙ্গিরা তাকে তালেবানদের কাছে হস্তান্তর করে।উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আল কায়েদা এবং তালেবান জঙ্গিদের লক্ষ্য করে পাকিস্তানী বাহিনী ২০১৪ সাল থেকে সামরিক অভিযান জোরালো করে। এর পাশাপাশি চলছিল মার্কিন ড্রোন হামলা।হায়দারকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেটি ছিল একটি যুদ্ধক্ষেত্র। তিনি বলেন, ড্রোনের শব্দ ছিল ভয়ঙ্কর। মনে হতো যেন একটি বড় মৌমাছি মাথার উপর বিকট শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটি নয়, একসঙ্গে চার-পাঁচটি ড্রোন হামলা চালানো হতো।পাকিস্তানি তালেবানদের হাতে যাবার পর খানিকটা উন্নতি হয় হায়দারের। তালেবানরা তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতো না, তাকে হাঁটার সুযোগ দেয়া হতো। খবরা-খবর শোনার জন্য তালেবানরা তাকে একটি রেডিও দিয়েছিল।তালেবানের হাতে প্রায় দুই মাস ছিলেন হায়দার। মে মাসের ৯ তারিখে তালেবানরা তাকে জানায়, এই জায়গাটি তাদের ছেড়ে দিতে হবে। কারণ তারা খবর পেয়েছে যে, এখানে মার্কিন বিমান হামলা চালানো হবে।হায়দার বলেন, আমরা রাতে সে জায়গা ছেড়ে দিলাম। তিন-চার ঘণ্টা হাঁটার পর বোমা নিক্ষেপের শব্দ শুনতে পেলাম। হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।তখন একজন এসে আমাকে বললেন, তার গায়ের শার্টটি খুলতে। তারপর একজন সেটি দিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলে।আটকের পর নিজেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানীর ছেলে বলে পরিচয় দিলেও কেউ তার কথা বিশ্বাস করছিল না। কিন্তু পরে তারা বুঝতে পেরেছিল যে তিনি সত্যি কথা বলছেন।এরপর এক মার্কিন সেনা সদস্য এসে তাকে জানান, আপনি মুক্ত। আপনি এখন বাড়ি যাচ্ছেন। অপহরণের প্রায় তিন বছর পর মুক্তি পান হায়দার গিলানী। টিটিএন/এবিএস
Advertisement