যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সমকামীদের নাইটক্লাবে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে অংশ নেওয়া ২৯ বছর বয়সী আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ওমর মতিন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী ছিলেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশটির প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সত্যিই কি ওই ঘাতক ইসলামিক স্টেটের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছে? না কি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ঘৃণার জন্য একটি গোষ্ঠীর অনুমোদন ও প্রচারণা চাচ্ছেন? ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে এ হামলার বেশির ভাগেরই পার্থক্য রয়েছে।গত দুই বছর ধরে দূরবর্তী কোনো অঞ্চলে হামলা চালাতে সদস্যদের প্রভাবিত করা ও তারপর গণহত্যা চালানো আইএসের প্রচারণার মূল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। হামলা চালাতে আইএসের এটি একটি কৌশল, যা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একনিষ্ঠ সদস্য ও সমর্থকরা বাস্তবায়ন করছে।হামলা চালানোর সময় মতিন জরুরি নম্বর ৯১১-এ কল দিয়ে কথিত ইসলামিক স্টেটের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করে। মতিনের বাবা সাদিক মতিন বলেছেন, হামলার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তার ছেলে কিছুদিন আগে মায়ামিতে দুজন পুরুষ পরস্পরকে চুম্বন করছে দেখে খুবই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। আইএসের উসকানিতে তৃতীয়বারের মত হামলার ঘটনা ঘটলো যুক্তরাষ্ট্রে।এর আগে গত ডিসেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যানবার্নাডিওতে এক দম্পতি অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে হামলা চালায়। তার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তারা আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে; যা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা পরে জানতে পায়। ২০১৫ সালের মে মাসেও টেক্সাসে এক বন্দুকধারী হামলা চালায়। আইএসের প্রতি প্রকাশ্যে এই আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা গেছে, শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে যারা এই গোষ্ঠীর নামে হামলা চালাতে আগ্রহী। বার্ষিক ভাষণ দেয়ার সময় গত মাসে সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীর মুখপাত্র আবু মুহাম্মদ আল-আদনানি রমজান মাসে হামলা চালাতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করে হামলা চালানোর উপদেশ দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে থেকে আপনারা ক্ষুদ্র কোনো হামলা চালালেও আমাদের বৃহৎ হামলার চেয়ে তা আমাদের কাছে বেশি প্রিয় এবং তাদের ধ্বংস করতে তা অধিক কার্যকরী। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আদনানি পরিষ্কার করে বলেন, যে কেউ এবং প্রত্যেকেই আমাদের এই গোষ্ঠীর নামে হামলা চালাতে পারেন এবং হামলা চালানো উচিত। তিনি বলেন, কারো অনুমতি চাওয়ার প্রয়োজন নেই। সমর্থকদের পরামর্শ দিয়ে আইএসের এই মুখপাত্র বলেন, যাদের অস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই, তারা পাথর, ছুরি এমনকি গাড়ি করে ব্যবহার কাফেরদের হত্যা করতে পারেন।তখন থেকেই এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামলা চালাতে সমর্থকদের প্ররোচিত করে আসছে। এছাড়া ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিহাদি প্রচারণা চালানোর জন্য ‘কিবোর্ড আর্মি’ নিয়োগ দিয়েছে। ওরল্যান্ডের ওই হামলার ঘটনায় ইসলামিক স্টেটের অপপ্রচার এবং টার্গেট পছন্দের প্রতিধ্বনি ছিল। এর আগে, এই জিহাদি গোষ্ঠী সমকামীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করেছে, সন্দেহভাজন সমকামীকে ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ছবি প্রকাশ করেছে। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র গবেষণা সহযোগী চার্লি উইন্টার বলেন, আমি মনে করি, ইসলামিক স্টেট যা করছে, তা অত্যন্ত ধূর্ততার সঙ্গে করছে এবং এটি এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে, যেখানে সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হয়েও যে কেউ হামলা চালাতে পারে। আইএসের উসকানিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওমর মতিন রোববার ওই হামলা চালিয়েছে। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক বলছে, তাদের এক সাহসী যোদ্ধা সমকামী নাইটক্লাবে হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করেছে। নিহত এই জঙ্গির সাবেক স্ত্রী সিতোরা ইউসুফি বলেছেন, মতিন খুব সহিংস ছিলেন। মানসিকভাবে অস্থিতিশীল মতিন তাকে নিয়মিত পেটাতেন। এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের গুলিতে নিহত ২৯ বছর বয়স্ক ওমর মতিনের উগ্র ইসলামপন্থী ভাবধারার দিকে ঝোঁক ছিল। তবে তার এই হামলা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়। এসআইএস/আরআইপি
Advertisement