বিশেষ প্রতিবেদন

প্লেন ক্র্যাশে নিশ্চিত মৃত্যু হচ্ছে জেনে শুধু কলেমা জপছিলাম

‘হঠাৎ করেই প্লেনটিতে প্রচণ্ড বাম্পিং শুরু। খাড়া উপরে উঠছে আর নামছে। একবার ডানে একবার বাঁয়ে কাত হচ্ছে। ইঞ্জিন চলছে প্রচণ্ড শব্দে। ওই অবস্থায় মনে একটাই ভাবনা, তবে কি প্লেন ক্র্যাশে (ধ্বংস) আমি মারা যাচ্ছি। নিশ্চিত মৃত্যুর কথা মনে করে তখন শুধু কলেমা জপছিলাম।’রোববার দুপুরে এভাবেই মাঝ আকাশে মৃত্যুঝুঁকির বর্ণনা দিচ্ছিলেন জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার। আগের দিন (শনিবার) সকালে দুই সহযোগীসহ আকাশ পথে কলম্বো থেকে দেশে ফেরার পথে বাংলাদেশ সীমান্তে ঝড়ের কবলে পড়েছিল তাদের বিমান।২৪ ঘণ্টা পরও তার সেই আতঙ্ক কাটেনি। বার বার বলছিলেন, জীবিত অবস্থায় ফিরবো আশাই করিনি। এ বিষয়ে আরও জানতে সহযাত্রী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা সৈয়দ মাহফুজুল হকের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখারও অনুরোধ জানান তিনি। সৈয়দ মাহফুজুল হকের ভাষায়, শনিবার সকাল ১১টা ৫মিনিটে মিহিন লংকা এমজে ৫০১ ফ্লাইটের হযরত শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। একটু আগে পাইলটের ঘোষণা কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা অবতরণ করবো। প্রথা অনুযায়ী কেবিন ক্রুরা ঘুরে ঘুরে সিট বেল্ট বাঁধা হয়েছে কিনা তদারকি করছেন। কলম্বো থেকে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে যখন প্লেনটি যাত্রা শুরু করে তখন আকাশ ছিল পরিষ্কার। রৌদ্রকিরণ ঝলমল করছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুই কর্মকর্তা ডা. রাশকিন ও ডা. আবদুল আলিমসহ তারা তিনজন শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী একটি সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরছিলেন। সৈয়দ মাহফুজুল হকের বর্ণণা মতে শাহজালাল বিমানবন্দরে পাইলটের ল্যান্ডিং ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যে তারা দেখতে পান আকস্মিক মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেছে আকাশ। এসময় প্লেনটি কয়েকবার ডানে বামে কাত হতে লাগল, ধুপ করে এয়ার পকেটে পড়ে গেল (যা সচরাচর ঘটে না)। এরপর শুরু হয় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি, হঠাৎ করে ইঞ্জিনের প্রচণ্ড শব্দ কানে এলো, মনে হলো পাইলট প্লেনটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না, দ্রুত গতিতে চালিয়ে এয়ার পকেট থেকে বের হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।ক্ষণিকের জন্য মনে হলো প্লেন ক্র্যাশের আগে এ মুহূর্তে কি করা উচিত। হাতের মোবাইলে কি একটি ছবি তুলে রাখবো? শেষ স্মৃতি হিসেবে কি নোটপ্যাডে গুড বাই জাতীয় কিছু লিখে যাবো? মনে নানা চিন্তা ভর করলেও সিট থেকে নড়ার অবস্থা ছিল না। তার আশপাশের মানুষ তখন জোরে জোরে কলেমা পড়ছিল। একজন যাত্রী ভয়ে মলত্যাগ করে দেয়। কয়েক মিনিট পর মনে হলো প্লেনটি জেট বিমানের গতিতে উপরে উঠছে। প্রথমে গাঢ় কালো মেঘের স্তর, তারপর সাদা মেঘ ও তারও উপরে উঠে নীল আকাশের দেখা মিললো। ডা. মাহফুজুল হক পরে রাডার ওয়েভ দেখে বুঝতে পারেন সকাল আনুমানিক ১০টা ৫০ মিনিটে ফরিদপুরের কাছাকাছি ১৯ হাজার ৪শ’ ফুট ওপর দিয়ে আসছিলেন তারা। হঠাৎ করে ঝড়ের কবলে পড়ে। ওই সময় যশোরের দিকে চলে গিয়ে বিমানটি বিপদমুক্ত হয়। দুপুর ১২টা ১ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে ল্যান্ড করেন তারা। পরবর্তীতে ডা. মাহফুজ ও ডা. রাশকিন পাইলটের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারেন চালক একবার ফ্লাইটটি কলকাতায় ল্যান্ড করার চিন্তা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শাহজালালে নিরাপদে ল্যান্ডিং করায় বেঁচে যায় প্রায় তিনশ’ যাত্রী । এমইউ/এমএমজেড/এসএইচএস/পিআর

Advertisement