কুড়িগ্রাম উলিপুরে ইউপি নির্বাচনী সহিংসতার মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে ১৪ দিন ধরে পুরুষশূন্য চরবজরা ও পঞ্চিম চরবজরা গ্রাম। গ্রেফতার আতঙ্কে ওই চরের দুটি মসজিদে আজান, জুমার নামাজ, এমনকি পবিত্র রমজানের তারাবিহর নামাজও হচ্ছে না। পুলিশের ভয়ে পুরুষরা আত্মগোপনে থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় আতঙ্ক নেমে আসে। এই সুযোগে বিভিন্ন বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটছে। গ্রামের মহিলারা অভিযোগ করেন, এ কারণে দারুণ নিরাপত্তাহীনতায় দিবানিশি কাটছে তাদের। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে ওই গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তাদের অভিযোগ অপরাধ যারা করেছে, তারা শাস্তি পাক, কিন্তু নিরপরাধ মানুষ যেন ঘরবাড়িতে থাকতে পারে প্রশাসনিকভাবে তার দাবি জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নির্বাচন গত ২৮ মে অনুষ্ঠিত হয়। চরবজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সু্ষ্ঠু ভোট ও ফলাফল হওয়ার পর পরাজিত দুই মেম্বার প্রাথী পূর্ণ গণনার দাবি করেন এবং প্রিসাইডিং অফিসারসহ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি লোকজন আটক করে। পরে উত্তেজিত জনতা কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়। এরপর দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রিসাইডিং অফিসারসহ অন্যদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ফারুক আহাম্মেদ বাদী হয়ে থানায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০ জনের নামে মামলা করেন। মামলা নং-৩২ তারিখ. ২৯/০৫/২০১৬ইং। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হাবিবুর রহমান মাস্টার (৪৫), মেহেদী হাসান (৪২) গুলিবিদ্ধ সুরুজ্জামান (৫৪), এরশাদ আলী (৩৫) ও আমিনুল ইসলামসহ (৪০) মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এরপর থেকে ওই চরে বসবাসকারী ৪০০ পরিবারের পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। পালিয়ে রয়েছে চরবজরা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. লিমন মিয়া (৪০) মোয়াজ্জেম মো. ইয়াকুব আলী (৫৫) ও পঞ্চিম চরবজরা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. আশরাফ আলী বকুল (৩৫) ও মোয়াজ্জেম মো. শুকুর আলীসহ (৬০) ওই চরের ৪/৫ পুরুষ মানুষ। ফলে ওই দুটি মসজিদে আজান, জুমার নামাজ ও রমজানের তারাবিহর নামাজ আদায় করা হচ্ছে না। ছকিনা বিবি জানান, এ ঘটনার পর তাদের বাড়ির ছোটবড় সব পুরুষ মানুষ পালিয়ে রয়েছে। সন্ধ্যা নেমে এলেই ভয়ে তাদের গা ছমছম করে বিনিদ্রা ও আতঙ্কে রাত কাটে। রমজান মাস হলেও রান্না-বান্না হচ্ছে না বলে অনেকেই না খেয়ে রোজা করছেন। এ অবস্থায় তারা নিরাপত্তাহীন ও আতঙ্কে রয়েছেন। পুরুষশূন্য বাড়িতে ঘটছে চুরির ঘটনা। নদীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা আবু তালেব মণ্ডল (৬৫) জানান, এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে অন্য যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।মামলার বাদী কেন্দ্র প্রিসাইটিং অফিসার ফারুক আহাম্মেদ জানান, তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা করেছেন। এ ব্যাপারে বজরা ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ রেজাউল করিম আমিন বাবলু জানান, যারা অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত, তবে নিরপরাধ মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। উলিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস কে আব্দুল্যাহ আল সাঈদ জানান, যারা অপরাধী তাদের ধরা হবে। নিরপরাধ কাউকে ধরা হবে না।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ এইচ এম জামেরী হাসান বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।নাজমুল হোসেন/এআরএ/পিআর
Advertisement