হাসিনার ফাঁদে পা দিতে চায় না বলেই বিএনপি নির্বাচন দাবি করছে। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, অনেকেই নির্বাচনের বিরোধিতা করছে, বিএনপির নামে অপবাদ দিচ্ছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে বিএনপি এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চায়। দেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র ধ্বংস করতে চায়। দেশের জনগণের জন্য কাজ করতে চায়।
Advertisement
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দুদু বলেন, যারা নির্বাচনে বাধা দিচ্ছেন তারা তো অনেক বড় নেতা, অনেক বড় আন্দোলনকারী। নির্বাচন দিলে তো আপনারা জয়ী হওয়ার কথা। নির্বাচন দিলে সমস্যা কোথায়? আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা কথা বলি- আগামী নির্বাচনে বিএনপি তো জিতবেই। তারপরের নির্বাচনও বিএনপি জিতবে। কেন জিতবে? কারণ বিএনপি জনগণের মধ্যে থাকতে চায়।
সাবেক এই সদস্য সংসদ বলেন, বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়েই দিয়েছে। এই ৩১ দফা পড়েন। তাহলে সংস্কার কী তা এক ঘণ্টার মধ্যেই জেনে যাবেন।
Advertisement
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, উদ্দেশ্য সৎ থাকলে বিএনপির ৩১ দফা পড়তেন। তা না করে শুধু সংস্কার সংস্কার করেন। একজন শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন করেছে। আর আপনারা শুধু সংস্কার সংস্কার করছেন। এগুলো বাদ দিতে হবে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে একটি ভালো নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। যে কারণে ৭৩ সাল থেকে সংকট শুরু হয়েছিল। সে সংকট কাটিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এরপরে সংকট কাটিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এবার সংকট কাটাবেন তারেক রহমান।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে পারেন না। আমাদের যারা সমন্বয়ক আছেন তারা গাজীপুরে গিয়েছিল, তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আপনারা সরকারে থাকা অবস্থায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে। লজ্জা থাকা উচিত।
কৃষকদলের সাবেক এ আহ্বায়ক বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি লড়াই করছে। যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিচারের দাবিতে ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে। প্রয়োজন পড়লে তারা রাজপথে নামবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে। ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আমাদের মুক্তির কোনো পথ নেই।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে একজন প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি হয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আবার প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে গিয়েছিলেন। এ রাজনৈতিক দলের নেত্রী ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি স্বৈরাচার এরশাদের যত আবর্জনা ছিল তা পরিষ্কার করেছেন। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের হয়ে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তিনি (বেগম খালেদা) রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় এনেছিলেন।
Advertisement
বাংলাদেশে সব অপকর্ম শেখ মুজিবুরের আমল এবং শেখ হাসিনার আমলে হয়েছে উল্লেখ করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষীবাহিনী তৈরি করেছিল। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করেছিল। দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল। দেশে এক দলের শাসন কায়েম করেছিল। সেই ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে পুনরায় মুক্ত করেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। আর জিয়াউর রহমান সব রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার ব্যবস্থা করেন। সব বন্ধ সংবাদপত্র খুলে দেন। এই জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে কৃষিখাতে আমূল পরিবর্তন আনেন। বিদেশে চাল রপ্তানির ব্যবস্থা করেন।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালে পরাজিত হয়েছে। এবারও বেগম খালেদা জিয়ার কাছে শেখ হাসিনা পরাজিত হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শত নির্যাতনের মধ্যেও দেশ ছেড়ে পালাননি। প্রমাণ করেছেন যে, তিনি দেশের নেত্রী, দেশের মানুষের নেত্রী। অন্য দিকে, শেখ হাসিনা এই দেশের মানুষের নেত্রী তো না, তিনি একজন ডাকাত, খুনি, লুটেরা। তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়ে এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। যে ষড়যন্ত্রের কারণে বাংলাদেশে অবস্থিত আওয়ামী লীগ কর্মীরা অনিরাপদ হয়ে গেছেন। বিশৃঙ্খলা বিএনপি পছন্দ করে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ উসকানি দিলে তার পরিণতি তাকে ভোগ করতে হবে।
আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব হুমায়ূন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিরুল ইসলাম কাজী, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী প্রমুখ।
কেএইচ/এএমএ/জিকেএস