ডেঙ্গুতে মেয়েকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ মা-বাবা
বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ গ্ৰামের অটোরিকশাচালক সোহেল খানের মেয়ে জান্নাতুল মীম (১০)। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিল। এরই মধ্যে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে শিশুটি।
ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার কামড়ে জীবন প্রদীপ থেমে গেছে তার। ছোট্ট মেয়েকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার।
জানা যায়, মেয়েকে হারানোর পর বাবা-মায়ের মুখে যেন কোনো খাবার উঠছে না। সবাই জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও তাদের মুখে শুধু মীমের কথা। এমনকি মীমের স্কুলের শিক্ষক-সহপাঠীদের মধ্যেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সহপাঠীরাও ভুলতে পারছে না তাকে।
- আরও পড়ুন
- রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গুতে নারীর মৃত্যু
- ডেঙ্গু সংক্রমণের মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন
- ডেঙ্গুতে বাবার মৃত্যু, ছেলের অবস্থাও সংকটাপন্ন
- ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডেঙ্গু আক্রান্ত যুবকের মৃত্যু
মীমের বাবা সোহেল খান কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাগো নিউজকে জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে মীম বড়। বাড়ির পাশের পশ্চিম হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো সে। পড়ালেখায়ও খুব মনোযোগী ছিল মীম। অটোরিকশা চালালেও সবসময় মেয়ের আবদার সাধ্য মতো পূরণ করতেন। ছোট্ট সেই মেয়েটি এখন আর এটা-ওটা নিয়ে বায়না ধরবে না। চিরদিনের জন্য থেমে গেছে তার রাগ-অভিমান।
সোহেল খান বলেন, ‘গত ১৪ নভেম্বর হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয় মীম। পরে এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়ালে জ্বর কিছুটা কমে, পরে আবার জ্বর ওঠে। এভাবে তিন-চারদিন জ্বর ওঠানামা করতে থাকে। পরে ১৮ নভেম্বর বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করাই। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক মীমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান যে ওর ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। তারপর সেখানকার চিকিৎসকরা মীমকে দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) নিতে বলেন।’
- আরও পড়ুন
- ‘একটি পদ্ধতিতে মশা নিধনে সফলতা আসবে না’
- বিয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত, তার আগেই ডেঙ্গুতে প্রাণ গেলো তামান্নার
- চাঁদপুরে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রকোপ
- ডেঙ্গুতে ভিকারুননিসার ছাত্রীর মৃত্যু
‘সকালে বরগুনা থেকে রওয়ানা দিয়ে দুপুর ১টায় শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে ডাক্তাররা দেখে স্যালাইন পুশ করেন। বিকেল ৩টার দিকে ওর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দৌড়ে ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসি। তারা এসে ওর মাস্ক ও স্যালাইন খুলে জানায় মীম মারা গেছে। তারপর বরিশাল থেকে মীমের নিথর দেহ নিয়ে রাতে বাড়ি পৌঁছাই। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে বাড়ির উঠানে মীমের দাফন সম্পন্ন করি।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছোট্ট মীম ছিল পড়াশোনায় মনোযোগী এবং খুব শান্ত প্রকৃতির। ওর বয়সী সবার সঙ্গেই ছিল গভীর সখ্য। পড়ালেখা ও খেলাধুলার পাশাপাশি বাড়িতে মা-বাবার কাজেও সহযোগিতা করতো মীম।
- আরও পড়ুন
- ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
- ময়মনসিংহ মেডিকেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
- ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
- বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু
মীমের সহপাঠী জিসান জাগো নিউজকে বলে, ‘মীম নাই তা মানতে খুব কষ্ট হইতেছে, ও খুব ভালো ছিল। আমরা সব সময় একসাথে খেলা করতাম। আর একসাথে খেলতে পারবো না, তা ভাবতেই খুব খারাপ লাগতেছে।’
এদিকে মীমকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে ঘরের এক কোণে দিনরাত বসে থাকেন তার মা। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেন না।
শিশু মীম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খবরে বরগুনার বেতাগী উপজেলার গ্ৰামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সবাই মীমের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছেন তার পরিবারকে।
এইচআরএস/এমএমএআর/জিকেএস