নিটোরে জুলাই আন্দোলনে আহতদের অবস্থান যে কারণে

আবদুল্লাহ আল মিরাজ
আবদুল্লাহ আল মিরাজ আবদুল্লাহ আল মিরাজ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৯ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে আহতরা কেউ হুইল চেয়ার আবার কেউ ভাঙা পা নিয়েই চেয়ার পেতে বসেছেন

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আহত আইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মিরাজ। তার দুই চোখে গুলি লেগেছে। বুধবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সামনের সড়কে দুপুর থেকে সুচিকিৎসার দাবিতে রাস্তায় অবস্থান করছেন তিনিসহ নিটোর এবং চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের আহত রোগীরা।

আল মিরাজ জাগো নিউজকে জানান, গত ১৯ জুলাই বিকেলে কাকরাইলে বিক্ষোভ করতে গিয়ে তিনি আঘাত পান। সেদিন থেকে তিনি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ৪২২ নম্বর রুমের ৪৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।

তিনি বলেন, আমার ডান চোখে রেটিনা ছিড়ে গেছে, বাম চোখে সীমিত দেখতে পাই। চিকিৎসকরা বলেছেন, ডান চোখের চিকিৎসা দেশে নেই। আমরা উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাস্তায় নেমেছি।

অন্যদিকে নিটোরে চিকিৎসাধীন থাকা আন্দোলনরত আহত শিক্ষার্থী মো. হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সামান্য ট্রিটমেন্ট দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে নয়টি অপারেশন করা হয়েছে, তারপরও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমাদের অপারেশনে শুধু নিয়ে যায়। আমরা চাই তারা সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই এক লাখ টাকা দিক এবং ভালোমানের চিকিৎসাসেবা দিক।

নিটোর সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে আন্দোলনে আহতদের মধ্যে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮৪ জন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ এর বেশি আহত রোগী নিটোর থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে হাত-পা কাটা গেছে ২১ জনের, যার মধ্যে ১৭ জনের পা এবং চারজনের হাত কাটা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে আহত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

jagonews24

এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে নিটোরে থাকা আহত রোগীদের খোঁজ-খবর নেন। এরপর হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় সেখানে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে এরপর আশপাশে আহত রোগীদের সরতে বলায় বাগ-বিতণ্ডার শুরু হয়। এরপর আন্দোলন হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসাধীন আহতরা উপদেষ্টার গাড়ির সামনে ও পথ আটকে দাঁড়ায়।

একসময় দেখা যায়, এক পর্যায়ে আন্দোলনে আহতদের একজন গাড়ির সামনে বসে পড়েন। আরেকজন উঠে পড়েন গাড়ির ওপর। কিছু সময় তারা গাড়িতে কিল-ঘুসিও মেরে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন। নেমে আসতে বলেন গাড়ির চালকসহ অন্যদের। পরে নিরুপায় হয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অন্য একটি গাড়িতে করে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পরে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই গাড়ি ও প্রটোকলে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি আটকে দেয় এবং রাস্তায় অবস্থান নেয়। এরপর রাত ১১টা ২০ পর্যন্তও আগারগাঁও থেকে শ্যামলীমুখি সড়ক বন্ধ ছিল।

আন্দোলনরতদের একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সিলেকটিভ কিছু রোগীর সঙ্গেই কথা বলেছেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি যেন সবার খোঁজ নেন। সমস্যা শুনে সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ নেন। কিন্তু মনের কথাগুলো শোনাতে না পেরে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে যান। কেউ কেউ খাওয়া-দাওয়ার মান নিতেও অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা ও ভালো চিকিৎসা দিতে বিদেশে নেওয়ার আবেদন জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি কেউ।

এ বিষয়ে নিটোরের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা হাসপাতালে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের এখান থেকে চীনের চিকিৎসকদল ঘুরে গেছে, থাইল্যান্ডের চিকিৎসকদল ঘুরে গেছে, যুক্তরাজ্যের চিকিৎসক দল আছে। আজ পর্যন্ত তারা ১৪ থেকে ১৫ জনের সার্জারি করে ফেলেছেন।

তিনি বলেন, এছাড়া বিদেশি চিকিৎসক দলগুলো আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে যথেষ্ট সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এখন বিদেশে যাওয়ার মতো যে রোগী যেমন যাদের নার্ভের সমস্যা তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়ে গেছে। তাদের বিষয় আমরা ঠিক করতে পারবো না, তা মন্ত্রণালয়ই দেখতে পারে। আমরা যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন বাইরে যাওয়ার জন্য আমরা তা বলে দিয়েছি।

এছাড়া নিটোরে অত্যন্ত ভালো চিকিৎসা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন একেকজন রোগীর ভালো হতে লাগবে লম্বা সময়। নার্ভে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের ও সুস্থ হতে লম্বা সময় লাগে। এখন এটাকে যদি বলে আমাদের চিকিৎসা ভালো হচ্ছে না, এর চেয়ে চরম অসত্য আর কিছু হতে পারে না। আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। আমাদের দুইটা ওয়ার্ড তাদের জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। এরকম যদি বলে আমরা চিকিৎসা দিতে পারছি না তাহলে আমরা আনডান।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে আহতদের জন্য আমরা স্পেশাল কেয়ারের ব্যবস্থা করেছি। তাদের জন্য আমাদের খাবারের তালিকা আলাদা করে দিয়েছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে ৮৪ জন আন্দলনে আহত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার এদের মধ্যে অনেকে রি-অ্যাডমিশন (পুনঃভর্তি) হয়েছে। কিন্তু কিছু রোগী আবার জোর করেও ভর্তি হচ্ছেন। সামান্য কিছু সমস্যা নিয়েও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এদের বিষয়টা সেনসিটিভ হওয়ায় আমরা ভর্তি না করিয়ে পারছি না। না হয় বলবে আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি না।

তিনি মূল কারণ হিসেবে জুলাই ফাউন্ডেশনের টাকার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এটি নিয়ে একটা ঝামেলা হচ্ছে। কেউ টাকা পেয়েছে, কেউ পায়নি।

কেন পাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো তাদের তথ্য ঠিক করছে। টাকা পাবে। আমাদের মনে হচ্ছে এ জন্যই আন্দোলন।

এএএম/এমআইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।