চিকিৎসক সংকটে ডিএনসিসি হাসপাতাল, কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৭:০১ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
ডিএনসিসি হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স সংকট/জাগো নিউজ

হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসায় শয্যা রয়েছে প্রায় ৭০০টি। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা ৫০টির বেশি। অবকাঠামো এবং পরিবেশ শহরের অন্য যে কোনো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে ভালো। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স নেই। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী।

এই চিত্র রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালের। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালটিতে এখন ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। পাশাপাশি বহির্বিভাগে শিশু, গাইনি রোগেরও চিকিৎসা মিলছে। তবে ৭০০টির মতো শয্যা থাকলেও সবমিলে হাসপাতালটিতে ২০০ জন রোগী ভর্তির ব্যবস্থা আছে। জনবল সংকটের কারণে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা, রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।

এদিকে হাসপাতালটির পরিবেশ, চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রোগীরা। কিন্তু অনেক সময় চিকিৎসক, নার্স খুঁজে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন তারা।

তবে ডিএনসিসি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালটি যাত্রা শুরুর পর থেকেই জনবল সংকটে ভুগছে। এ ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা জনবল দিচ্ছে না। ফলে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

চিকিৎসক সংকটে ডিএনসিসি হাসপাতাল, কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না

ডিএনসিসি হাসপাতালটি মূলত একটি বিপণি-বিতান। এর আয়তন এক লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট। রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে সাত দশমিক ১৭ একর জমিতে এটি নির্মাণ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বিপণি-বিতানটি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তখন হাসপাতালটিতে মোট এক হাজার ৫৪টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়। আইসিইউ শয্যা ছিল ২১২টি। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় তখন এটি ছিল দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল।

আরও পড়ুন

তবে ২০২২ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে হাসপাতালটি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই এই হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্যান্য কয়েকটি রোগের চিকিৎসকও হাসপাতালটিতে বসেন। তবে হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীদের ৮০ শতাংশই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ।

ডিএনসিসি হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে বর্তমানে (১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) ১৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ২৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ জন ভর্তি হয়েছেন। আবার চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৯ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসি হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে জুন বা জুলাই থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হতো। এবার সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আসা শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরে এই হাসপাতালে ৭৯৪ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুজন। আজ ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৬৮৮ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুজন। চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির হার আরও কয়েকগুণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে হাসপাতালের যে জনবল তা দিয়ে ২০০ জনের বেশি রোগী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না।’

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন ডেঙ্গু রোগীরা। যাদের আগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা আছে, তাদের সরাসরি ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। নার্সরা রোগীদের ট্রলিতে করে শয্যায় নিয়ে যাচ্ছেন। যাদের পরীক্ষা করা নেই, তারা জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষার নমুনা দিচ্ছেন। তারপর হাসপাতালে ভর্তি রাখা হচ্ছে। তবে আয়তনের তুলনায় হাসপাতালটি ফাঁকা লাগছে। এছাড়া ছয়তলা হাসপাতালের অধিকাংশ শয্যা ফাঁকা দেখা গেছে।

চিকিৎসক সংকটে ডিএনসিসি হাসপাতাল, কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না

উত্তর বাড্ডার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নুরুল ইসলাম। গত ১২ অক্টোবর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আলাপকালে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালটিতে চিকিৎসার মান খুবই ভালো। তবে বিকেল এবং রাতের শিফটে ডাক্তার, নার্স কম থাকেন। তখন কোনো সমস্যা হলে তাদের খুঁজে আনতে হয়।’

আরও পড়ুন

নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটির বাসিন্দা মো. মনির হোসেন। এই এলাকায় তিনি একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। গত রোববার রাতে জ্বর নিয়ে ডিএনসিসি হাসপাতালে ভর্তি হন। এখন তিনি অনেকটা সুস্থ বলে জানান। মনির হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জের এক চিকিৎসক ডিএনসিসি হাসপাতালের ঠিকানা দেন। পরে এখানে আসি। এখানে ভালো চিকিৎসা পেয়েছি।’

ডিএনসিসি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাদিয়া সুলতানা জাগাে নিউজকে বলেন, ‘এখন তাদের হাসপাতালে মাত্র ৪৭ জন মেডিকেল অফিসার, ৭২ জন নার্স রয়েছেন। এ জনবল দিয়ে ২০০ জন রোগীকে তিন শিফটে চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ জনবল রোগীদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। জনবল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছি না। জনবল সংকট দূর হলে রোগীর উন্নত চিকিসা দেওয়া সজহ হতো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ৫০টি আইসিইউ শয্যা আছে। কিন্তু অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স না থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এসব সেবা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের জনবল দরকার। তবে এমন সংকটের মধ্যেও এখন আমাদের মূল ফোকাস ডেঙ্গুর দিকে।’

চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাজমুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এমএমএ/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।