বাস্তবায়নে ১১ উন্নয়ন সহযোগী

স্বাস্থ্য-পুষ্টি উন্নয়নে আসছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩৮ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

সাধারণ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবার দক্ষতা ও সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শুরু হচ্ছে ‘পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি’। এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিখাতের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি।

এই কর্মসূচির মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি খাত থেকে আসবে ৮০ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। মেগা কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রকল্প ঋণ হিসেবে ২৫ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা দেবে ১১ উন্নয়ন সহযোগী। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর ছয় বছরে দেশবাসীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়নে এই বড় অংকের টাকা ব্যয় করা হবে।

প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন (পিইসি) কমিটির সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ পাঠিয়েছে কমিশন। এছাড়া কিছু খাতের ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রকল্পটি সংশোধন করে পাঠালে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ‘পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি’ প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের এটা বিশাল প্রকল্প। আমরা যাচাই-বাছাই করছি, আমাদের কিছু কোয়েরি আছে, তাদের (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) কাছে পাঠিয়েছি। তারা সংশোধন করে পাঠাবে। কিছু সভা করেছি, সামনে আরও সভা করবো। সভা শেষ করেই আমরা চূড়ান্ত অনুমোদনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’’

মেগা কর্মসূচি বাস্তবায়নে পাশে ১১ উন্নয়ন সহযোগী

প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা বা প্রকল্প সাহায্য বাবদ আসবে ২৫ হাজার ৪১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বা ২৩১ কোটি মার্কিন ডলার। এ ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক থেকে ৪৭ দশমিক ৯ কোটি মার্কিন ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৫০ কোটি ডলার, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে ৭ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ মিলবে।

এছাড়া গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ফ্যাসিলিটি (জিএফএফ) থেকে ২৫ মিলিয়ন, এডিবি থেকে ৩ মিলিয়ন, জাইকা থেকে ৬ মিলিয়ন, গ্লোবাল ফান্ড থেকে ১৬৯ মিলিয়ন, সুইডেন থেকে ১২ মিলিয়ন, কানাডা থেকে ৩.৬৯ মিলিয়ন, ইউনিসেফ থেকে ৬৯.৬০ মিলিয়ন, গ্যাভী থেকে ১৯৯ দশমিক ৬০ মিলিয়ন, ইউএনএফপিএ থেকে ১০ মিলিয়ন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে ৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানসহ মোট ৫২৯.৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) ড. শাহ্ মো. হেলাল উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য-পুষ্টিখাতে সব থেকে বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রকল্পের প্রস্তাবনা কমিশনে পাঠিয়েছি। সংস্থা ও দেশসহ ১১টি উন্নয়ন সহযোগী আমাদের এই প্রকল্পের আওতায় ঋণ ও অনুদান দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট পাওয়া।’

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানায়, বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচি (চতুর্থ এইচপিএনএসপি) জুন ২০২৪-এ সমাপ্ত হয়। পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচির প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যানের (পিআইপি) খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। সেক্টর কর্মসূচি মন্ত্রণালয়ের উভয় বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলেও কর্মসূচির প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন সম্পর্কিত সার্বিক সমন্বয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সম্পন্ন করছে। কর্মসূচির খসড়া পিআইপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণের উদ্দেশ্যে যাচাই কমিটির বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পিআইপি পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হবে।

বিগত চারটি কর্মসূচি ও প্রস্তাবিত পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচির তুলনামূলক চিত্র এবং প্রস্তাবিত পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচি প্রণয়নের বিভিন্ন ধাপ, ভিশন, মিশন, উদ্দেশ্য, কৌশলগত উদ্দেশ্য, অগ্রাধিকার কার্যক্রম এবং বাস্তবায়ন ও কৌশল নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ১৯৯৮ সালের আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ভিত্তিক পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। প্রায় ১২৬টি প্রকল্প একীভূত করে ১৯৯৮-২০০৩ মেয়াদে ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএসপি)’ শীর্ষক প্রথম সেক্টর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৩-২০১১ মেয়াদে দ্বিতীয় সেক্টর কর্মসূচি, ২০১১-১৬ মেয়াদে তৃতীয় সেক্টর কর্মসূচি এবং জানুয়ারি ২০১৭-জুন ২০২৪ মেয়াদে চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন: বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচি প্রণয়নের কাজ শুরু করে। পরে এই কর্মসূচি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার লক্ষ্যে তিনটি কমিটি যথা: হাই লেভেল কমিটি, স্টিয়ারিং কমিটি এবং টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়।

আরও পড়ুন

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানায়, প্রস্তাবিত মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন ২৩টি অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৬ হাজার ৪৯১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা কর্মসূচির মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন ১৫টি ওপির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা, যা কর্মসূচির মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ে সরকারের অবদান ৭৬ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান ২৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। চতুর্থ সেক্টর কর্মসূচির প্রণয়ন ব্যয়ের তুলনায় পঞ্চম সেক্টর কর্মসূচিতে উন্নয়ন ব্যয় ৫৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি সেবা, সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড, প্রশিক্ষণ বা উচ্চশিক্ষা, ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মশালা বা সেমিনার, তথ্য ব্যবস্থাপনা বা মানবসম্পদ উন্নয়ন, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন, গবেষণা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন।

এমওএস/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।