‘আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই জানেন না হেপাটাইটিসের ভাইরাস আছে’
এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হচ্ছে আজ রোববার (২৮ জুলাই)। ২০০৮ সালে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেয় ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেপাটাইটিস বি ও সি আক্রান্ত প্রায় এক কোটির মানুষের ৯০ শতাংশই জানেন না তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে হেপাটাইটিসে প্রতিবছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ৮ হাজার ৬৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সি ভাইরাসের জন্য ৮ হাজার ২৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
হেপাটোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে হেপাটাইটিস আক্রান্তের হারে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর কারণ ৯০ শতাংশ মানুষ তাদের রোগ সম্পর্কে জানেনই না। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস নিয়ে সর্বশেষ জরিপ পরিচালিত হয় ২০১৮ সালে। দেশব্যাপী পরিচালিত সেই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৮৫ লাখ হেপাটাইটিস বি এবং ১৫ লাখ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ লাখ পুরুষ এবং ২৮ লাখ নারী রয়েছেন।
অন্যদিকে, লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্ডিস নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৭৬ শতাংশ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত।
হেপাটাইটিস হলো যকৃতের প্রদাহ। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে যকৃতে প্রদাহ হয়ে থাকে। এর কিছুতে স্বল্পমেয়াদি আবার কোনো ভাইরাসে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়, যা থেকে সিরোসিস, এমনকি লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস গোত্রের ভাইরাস ছাড়াও কিছু জীবাণু লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
এ বিষয়ে হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, হেপাটাইটিসের পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তা ২০১৮ সালের। এরপর সারাদেশে কোনো জরিপ পরিচালিত হয়নি। বর্তমানে আমরা এ সংখ্যা কমার দিকে রয়েছি। আমাদের ধারণা, বর্তমানে ৫ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত। এই সংখ্যাটি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম। অর্থাৎ হেপাটাইটিসের ট্রেন্ড কমার দিকে। ১৯৮৩ সালে দেশব্যাপী ১০ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ছিল, বর্তমানে কমে এসেছে। এর কারণ আমাদের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। এর আওতায় সারাদেশে বাচ্চাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ৯৫ শতাংশ শিশুকে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা বেশিরভাগ মানুষ জানেন না তাদের হেপাটাইটিস রয়েছে। এক কোটি মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশইই তাদের রোগের বিষয়ে জানেন না। ফলে আক্রান্তদের রোগের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা তা জানে না। তারা নানাভাবে অন্যদের মধ্যেও এটি ছড়াচ্ছে।
এএএম/এসএনআর/জিকেএস