জনস্বাস্থ্যের ল্যাবে তরমুজ পরীক্ষার বাজেট নেই
রাজধানীর কলাবাগানের গৃহবধূ তানিয়া আক্তার স্থানীয় বাজার থেকে ২শ’ টাকায় একটি মাঝারি সাইজের তরমুজ কিনে বাসায় নিয়ে যান। গরমে তেষ্টা মেটাতে তরমুজ কেটে ভেতরটা লাল দেখে খুশি হলেন। আধা ঘণ্টা ফ্রিজে ঠাণ্ডা করে দু’টুকরো তরমুজ মুখে দিয়ে পানসে স্বাদে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ছেলেমেয়েদেরই একই অবস্থা। খেয়ে স্বাদ না পেয়ে ফেলে রেখে দৌড়ে চলে গেলেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তানিয়া খুব দুঃখ করে বলেন, আগের মতে সেই তরমুজের স্বাদ আর নেই। শৈশবে বাবা বাজার থেকে যে তরমুজ আনতেন তার ভেতরটা থাকতো লাল টকটকে, চিনির গুড়োর মতো দানা দানা থাকতো তরমুজে। কি যে মজাদার ছিল সেই তরমুজ।
সচেতন এ গৃহবধূ জানতে চাইলেন, ভেতরে লাল রংয়ের হলেও তরমুজের সেই স্বাদ নেই কেন? মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট তো জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল) স্থাপন করে ফলফলাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, তরমুজ পরীক্ষা করা হচ্ছে কী?
তানিয়ার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তরমুজের ভরা মৌসুম চললেও তারা তরমুজের গুণগত মান দেখতে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনএফএসএলের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা ও আশেপাশের উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা বাজার থেকে বিভিন্ন ফলমূল, তরিতরকারি ও মসলার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য প্রথমবারের মতো গতবছর মাত্র ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
নভেম্বর মাস থেকে প্রতি মাসে উৎপাদক, পাইকারিও খুচরা বাজার থেকে ৯টি করে মোট ২৭টি নমুনা পরীক্ষা ও ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। জুনমাসে অবধি যে সকল ফলমূল, ততিরকারি ও মসলা ল্যাব টেস্টের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে সে তালিকায় তরমুজের নাম নেই। তাই তরমুজের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই।
ল্যাবের ওই কর্মকর্তারা বলেন, দেশের জমিতে এখন বিভিন্ন হাইব্রিড তরমুজ উৎপাদন ও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে। মাটির সেই উর্বরতা নেই, পানিও দূষিত হয়ে গেছে। ক্ষেতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে দ্রুত ফলন করা হচ্ছে। ফলে কোনো তরমুজেই আগের সেই স্বাদ নেই।
রাজধানীর মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা এক অভিভাবক সাড়ে ৩শ’ টাকায় একটি বড় তরমুজ কিনে বাসায় নিয়ে যান। তরমুজ খেয়ে তার ছেলে ঘুমাতে যায়। তরমুজ খাওয়ার পর তার স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ঘুম বেশি হয়। তরমুজের স্বাদটাও ছিল তেতো বলে ও্ই অভিভাবক জানান।
তরমুজের স্বাদ নিয়ে জনমনে প্রশ্নতো রয়েছে তদুপোরি তরমুজ খেয়ে টাঙ্গাইলে একজনের মৃত্যু ও কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিযোগও উঠেছে। পুলিশ তরমুজের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য এনএফএসএলে পাঠিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনএফএসএল প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ তরমুজে কি কি উপাদান রয়েছে তা জানতে নমুনা ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও কোন জেলার পুলিশ, তরমুজ খেয়ে কার মৃত্যু হলো, কে কে অসুস্থ হলো সে ব্যাপারে কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
জনস্বার্থে বাজার থেকে তরমুজের নমুনা কিনে এনে পরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সীমিত বাজেটে নির্দিষ্ট ফলমূল, শাকসবজি ও মসল কিনে পরীক্ষা চলছে। সেই তালিকায় তরমুজ নেই বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, আগামী বাজেটে টাকার অংক বৃদ্ধির আবেদন জানানো হবে এবং আরো বড় পরিসরে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে ২০১৪ সালের ২০ এপ্রিল কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে বাজার থেকে বাবার কিনে নেয়া তরমুজ খেয়ে স্মৃতি নামে নয় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তরমুজ বিক্রেতা রেজাউল করিমকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ।
ওই ঘটনায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর ইনভেস্টিগেশন অফিসার ড. ওয়ালিউর রহমানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে তরমুজের নমুনা সংগ্রহ করে এনএফএসএলে পাঠায়। পরবর্তীতে ল্যাব পরীক্ষায় কোনো ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল নয়, তরমুজে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল সংক্রমণে ওই শিশুর মৃত্যু হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি