‘খরচ কমাতে’ ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার পরামর্শ
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশনে (ব্যবস্থাপত্রে) ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক। তবে আমাদের দেশে লেখা হয় কোম্পানির দেওয়া নাম। এতে ওই ওষুধ বাজারজাত করতে বিজ্ঞাপন বাবদ গুনতে হয় বাড়তি খরচ।
কোনো ওষুধ বাজারে আসা পর্যন্ত ব্যয়ের ২৯ শতাংশ খরচ হয় চিকিৎসকদের পেছনে বিজ্ঞাপনে। এ বিজ্ঞাপনের কারণে অতিরিক্ত খরচ টানতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ওষুধের উচ্চ বিজ্ঞাপন খরচ কমাতে ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নাম লেখার পরামর্শ খাত সংশ্লিষ্টদের।
শনিবার (২৫ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় উঠে আসে এসব তথ্য। আলোচনা সভা আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্স (আইএইচই)।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএইচই’র অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। উপস্থিত ছিলেন ওষুধ প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ও চিকিৎসকরা।
আলোচনায় স্বাস্থ্য খাতের অনেক দুর্বলতার চিত্র উঠে আসে। চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য, ওষুধের মানের দুর্বলতা, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জনবল কম থাকা ও দুর্বলতার চিত্রের সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের নানান অসংগতি তুলে ধরা হয়।
জেনেরিক নাম বাধ্যতামূলকে বাধা কোথায়?
আলোচকদের পরামর্শে উঠে আসে, দেশে ২ লাখের বেশি ওষুধের দোকান (ফার্মেসি) রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮৪ হাজার নিবন্ধন করেছে। অনেক মডেল ফার্মা করা হলেও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ নেই। একই ওষুধের বিভিন্ন কোম্পানির মানে রয়েছে ভিন্নতা। এছাড়া বাংলাদেশে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে এখনই চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নাম লিখলে বিজ্ঞাপনকেন্দ্রিক কমিশন বালিজ্য চিকিৎসক থেকে বন্ধ হলেও তা ফার্মাসিস্ট ও ওষুধের দোকানকেন্দ্রিক শুরু হতে পারে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট ও কর্মচারীর অভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আলোচকরা জানান, দেশে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র, এভারকেয়ার সহ কিছু বিশেষ হাসপাতালে চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নাম লিখে থাকেন। এর বিস্তৃতি আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
ফার্মাসিস্ট তানভীর আশরাফ বলেন, ব্যবস্থাপত্রে জেনেরিক নাম লেখা হলে এ মুহূর্তে বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে। দেশে সব কোম্পানির ওষুধের মান একই না। এতে করে জেনেরিক নাম লেখা হলে ওষুধের মানের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে গ্রাহক। এছাড়া ওষুধের দোকানগুলোর মানোন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। ফার্মাসিগুলোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে এ, বি, সি ক্যাটাগরি না রেখে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ১০ বছর পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কীভাবে দেখতে চাই তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা দেশের চিকিৎসক, নার্স ও প্যারা প্রফেশনালের রেশিও ঠিক করতে চাই।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিবর্তনে নানান পরামর্শ আসে। এর মধ্যে রয়েছে- চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের জন্য নৈতিকতা শিক্ষা, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ) শক্তিশালী করে মনিটরিং বাড়ানো, চিকিৎসকদের মনিটরিং শক্তিশালী করা। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতের বিষয়গুলোকে হালকাভাবে না দেখে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন আলোচকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক শিখা গাঙ্গুলি বলেন, আমরা চিকিৎসকরাও ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার পক্ষে। তবে তার আগে ফার্মেসিগুলোকে অবশ্যই নিয়ম মেনে চলতে হবে। সব কোম্পানির ওষুধ যদি একই মানের হয়, তাহলে ফার্মাসিস্টকে ওষুধ দেওয়া নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। দেশের সব ফার্মেসিতে নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট নিয়োগ বাস্তবায়ন না করে জেনেরিক নাম লেখার উদ্যোগ সফল হবে না।
এএএম/কেএসআর/জেআইএম